অফিসার নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক, যেভাবে প্রস্তুতি

বাংলাদেশের চাকরির বাজারে বিসিএসের পাশাপাশি আর যেসব চাকরি নিয়ে প্রার্থীদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে অফিসার (জেনারেল) নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। অনলাইনে আবেদনের শেষ তারিখ ১৩ এপ্রিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়া, কর্মপরিধি, চাকরির সুযোগ-সুবিধা এবং অন্য সব বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন অফিসার-জেনারেল (বর্তমানে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত) সফিকুল ইসলাম সোহেল

নিয়োগ প্রক্রিয়া

যাঁদের জেনারেল কোরে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁরা ব্যাংকের সব বিভাগে কাজ করার সুযোগ পান। আর যাঁরা বিশেষায়িত বিভাগে নিয়োগ পান তাঁরা ওই বিভাগে কাজ করেন। অর্থাৎ যাঁরা সামনে ‘অফিসার (জেনারেল)’ হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন, তাঁরা ব্যাংকের প্রায় সব বিভাগে এবং সব অফিসে কাজ করার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশের প্রায় সব বিভাগীয় শহর ও বিভাগের বাইরে বগুড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিস রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে দীর্ঘ পদক্রম এবং নিয়মিত পদোন্নতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি চাকরিপ্রার্থীদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে ১৯৮৮, ১৯৯৩, ১৯৯৯, ২০১৭, ২০১৯ ব্যাচের অফিসার (জেনারেল) ব্যাচ কর্মরত রয়েছে। এ ছাড়া ২০২১ সালে একটি ব্যাচ যোগদানের অপেক্ষায় রয়েছে এবং নতুন এ ব্যাচের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। সাধারণত তিনটি ধাপ অতিক্রম করে একজন প্রার্থী অফিসার (জেনারেল) হিসেবে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগে কোনো অর্থ বা ফি ছাড়াই আবেদন করা যায়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক নবম ও দশম গ্রেডে সাধারণত সহকারী পরিচালক, অফিসার ও অফিসার (ক্যাশ) হিসেবে নিয়োগ দেয়। এ ছাড়া অনেক সময় সহকারী পরিচালক (জেনারেল)/ অফিসারের (জেনারেল) পাশাপাশি সহকারী পরিচালক (পরিসংখ্যান)/ সহকারী পরিচালক (সিভিল ইঞ্জিনিয়ার)/ সহকারী পরিচালক (গবেষণা) বা এ রকম কয়েকটি বিশেষায়িত সেক্টরে নিয়োগ দেওয়া হয়।

 

প্রিলিমিনারি

নিয়োগের প্রথম ধাপে হয় ১০০ নম্বরের এমসিকিউ (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষা। এখানে সাধারণত বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান এবং কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। প্রিলিতে গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে সাধারণত বেশি প্রশ্ন থাকে। নেগেটিভ মার্কিং থাকবে কি না সেটি পরীক্ষার শুরুতেই প্রশ্নপত্রে ভালো করে খেয়াল করে নিতে হবে। প্রিলিমিনারির মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সঠিক প্রস্তুতির জন্য বিগত বছরের প্রশ্নের ধরন দেখা যেতে পারে। ২০১৭ ও ২০১৯ ব্যাচের প্রশ্ন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলায় ২০-২৫, ইংরেজিতে ২০-২৫, গণিত ও মানসিক দক্ষতায় ২০-২৫, সাধারণ জ্ঞান এবং কম্পিউটার ও প্রযুক্তি বিষয়ে ২০-২৫ নম্বরের প্রশ্ন এসেছে। বিগত পরীক্ষাগুলোতে বাংলায় ব্যাকরণ থেকে বেশি প্রশ্ন এসেছে এবং সাহিত্য থেকে তুলনামূলক কম প্রশ্ন এসেছে। বাংলা বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য ড. হায়াৎ মামুদের ‘ভাষা শিক্ষা’ বইটি সহায়ক হিসেবে দেখা যেতে পারে।

ইংরেজি বিষয়ে Grammar এবং Vocabulary থেকে প্রশ্ন এলেও ইংরেজি সাহিত্য থেকে তেমন প্রশ্ন আসে না বললেই চলে। ইংরেজিতে প্রস্তুতির জন্য বিগত বছরের প্রশ্নের পাশাপাশি indiabix.com ওয়েবসাইটের প্র্যাকটিসগুলোর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

গণিতে ভালো করতে হলে অবশ্যই পাটিগণিত টাইপের অঙ্কে বেশি জোর দিতে হবে এবং GRE/GMAT-এর ম্যাথ অংশ সহায়ক হতে পারে। সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে সমসাময়িক বিষয়ের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে পত্রিকা পড়ার কোনো বিকল্প নেই। কম্পিউটার ও প্রযুক্তি বিষয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ও কম্পিউটার বিষয়ে বিশদ জ্ঞান রাখতে হবে।

 

লিখিত

যত সংখ্যক প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হবে, সাধারণত এর ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য সুযোগ দেওয়া হয়। এখানে লিখিত পরীক্ষা ২০০ নম্বরের। লিখিত পরীক্ষায় ইংরেজি, বাংলা, গণিত ও সমসাময়িক বা অর্থনৈতিক বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। বিগত বছরের প্রশ্ন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০-২৫ নম্বরের ফোকাস রাইটিং, ১৫ নম্বরের ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ, ২০-২৫ নম্বরের ইংরেজি ফোকাস রাইটিং এবং ১৫ নম্বরের বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ আসে। ইংরেজি অংশে একটি কম্প্রিহেনশন থেকে ৪-৫টি প্রশ্ন করা হয়, যেখানে ২০ নম্বর বরাদ্দ থাকে।

kalerkantho

অর্থনীতিবিষয়ক ১৫-২০ নম্বরের ফোকাস রাইটিং এবং ব্যাংকিং-অর্থনৈতিক ও সমসাময়িক যেকোনো বিষয়ের ওপর ২০-৩৫ নম্বরের ৫-৭টি শর্ট নোটস লিখতে বলা হয়। গণিত অংশ বাংলাদেশ বাংকের লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মার্কস পাওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গণিতে ৫ থেকে ৮টি প্রশ্নের সমাধান করতে বলা হয়, এর জন্য থাকে ৪০-৫০ নম্বর। লিখিত পরীক্ষায় শতভাগ উত্তর করার প্রচেষ্টা থাকতে হবে, কারণ অনেকাংশে লিখিত পরীক্ষার নম্বরের ওপরই চাকরি পাওয়া নির্ভর করে।

 

মৌখিক

প্রাথমিকভাবে একজন প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার সর্বশেষ ধাপ হলো মৌখিক পরীক্ষা। এই অংশে একজন প্রার্থীকে ২৫ নম্বরের মধ্যে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ও মৌখিক অভীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়ে থাকে। মৌখিক অভীক্ষায় সাধারণত প্রার্থীর পঠিত বিষয়, নিজ জেলা, মুক্তিযুদ্ধ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থনীতি বিষয়ক প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। প্রত্যেক ভাইভা প্রার্থীকে ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক কিছু বিষয়ে সাধারণত প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। Monetary Policy, Fiscal Policy, Repo, Reverse repo, Bank rate, Central Bank, Commercial Bank, Schedule Bank, Non-schedule Bank, CRR, SLR, GDP, Mobile Banking, Agent Banking, Bank note-সহ বেশ কিছু বিষয়ে সম্যক ধারণা রাখতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার পর নির্বাচিত প্রার্থীদের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে মেডিক্যাল টেস্ট ও সনদ যাচাই বা অন্যান্য কার্যক্রমের পর চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়।

 

পদক্রম ও কর্মপরিধি

বাংলাদেশ ব্যাংকে যাঁরা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন, তাঁরা দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে সহকারী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। অফিসার থেকে ক্রমান্বয়ে সহকারী পরিচালক, উপপরিচালক, যুগ্ম পরিচালক, উপমহাব্যবস্থাপক, মহাব্যবস্থাপক এবং নির্বাহী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পাবেন। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আপনি কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাবেন। অফিসার (জেনারেল) হিসেবে নির্বাচিত হলে ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগে কাজ করার সুুযোগ থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও আপনি বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট, বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস, ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবিসহ নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পাবেন।

 

সুযোগ-সুবিধা

১) দেশের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করতে পারবেন।

২) দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে অফিস হওয়ায় সব সময় শহর অঞ্চলে বসবাস করতে পারবেন।

৩) বাংলাদেশ ব্যাংকারদের জন্য চাকরির বয়স তিন বছর পূর্তিতে প্রায় এক কোটি টাকা হাউজ লোন পাবেন।

৪) দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।

৫) সব কর্মকর্তার জন্য মোবাইল ও ইন্টারনেট ভাতার ব্যবস্থা রয়েছে।

৬) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় সব শাখায় নিজস্ব মেডিক্যাল সেন্টার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওষুধের ব্যবস্থা রয়েছে।

৭) প্রতিদিন লাঞ্চভাতা এবং বাৎসরিক মূল বেসিকের ৪-৫টি হারে ইনসেনটিভ বোনাস পেতে পারেন। 

৮) বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব কো-অপারেটিভ রয়েছে, যার শেয়ার মালিক হতে পারবেন।

৯) বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন।

১০) প্রেষণে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ লাভেরও সুযোগ রয়েছে।

সুত্রঃ কালের কন্ঠ