করোনাকালে চাকরিপ্রার্থীদের বয়সকে বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে যাঁদের বয়স ৩০ বছরের খুব কাছাকাছি বা মাসখানেক আগে ৩০ বছর অতিক্রম হয়ে গেছে তাঁদের জন্য সুখবর আসছে। করোনা পরিস্থিতিতে অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে পারেনি। যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের খালি থাকা পদের বিপরীতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছিল বা প্রস্তুতি নিচ্ছিল, করোনার পর সেসব নিয়োগ বিজ্ঞপিতে করোনাকালের বিশেষ পরিস্থিতিকে ‘লস টাইম’ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হবে। এসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানোর চিন্তা করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ বছর।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র কালের কণ্ঠকে জানিয়েছে, এ বিষয়টিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা করছে। গত ২৬ মার্চের পর যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল; কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে দিতে পারেনি, সে ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীদের বয়স বিবেচনায় নেওয়া হবে। অর্থাৎ যাঁদের বয়স ২৬ মার্চের আগে ৩০ বছরের নিচে ছিল তাঁদের বয়স এখন ৩০-এর বেশি হয়ে গেলেও ওই সময়ে যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর্যায়ে ছিল সেগুলোতে বিশেষ বিবেচনায় তাঁরা অংশ নিতে পারবেন। করোনার পর সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি উল্লেখ করে দেওয়া হবে।
সূত্র আরো জানায়, করোনা পরিস্থিতির আগেই প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যাঁরা আবেদন করেছেন এবং করোনার কারণে নিয়োগ পরীক্ষা হয়নি সেগুলোও করোনা পরিস্থিতির পর অনুষ্ঠিত হবে। তবে তাঁদের ক্ষেত্রে আলাদা বয়স বিবেচনার প্রয়োজন হবে না। যেহেতু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আগে থেকেই আবেদন করে রেখেছিলেন।
গত শনিবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ বিষয়টি আমরা সক্রিয়ভাবে চিন্তা করছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে এ ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আগামীকাল (রবিবার) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সীমিত পরিসরে খুলছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, করোনার কারণে বয়স বিবেচনার জন্য ঈদের আগে ঘোষণা দেওয়ার মতো কোনো সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা কম। দেশ কখন স্বাভাবিক হবে তা এখনো অনুমান করা যাচ্ছে না। বয়স বিবেচনার জন্য নির্দিষ্ট একটা সময়কে উল্লেখ করতে হবে। সেই হিসাবে শুরুর সময়টা সবার জানা, সেটা ২৬ মার্চ থেকে ধরা হবে। আর শেষের সময়টা কোন মাসের কত তারিখ হবে, সেটা নির্ধারণের পর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। তবে এর আগেই বয়স বিবেচনার জন্য মৌখিকভাবে চাকরিপ্রার্থীদের আশ্বস্ত করতে পারে মন্ত্রণালয়।
কবে নাগাদ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসনসচিব শেখ ইউসুফ হারুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটা শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারণের বিষয়। আপাতত মন্ত্রিসভা বৈঠক, নিয়মিত অফিস কিছুই হচ্ছে না। শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা এলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলছেন, ‘এটা নির্ভর করছে এই পরিস্থিতির পর কখন থেকে আমরা স্বাভাবিক কার্যক্রমে যাব তার ওপর।’ তিনি আরো বলেন, ‘বেকার ও চাকরিপ্রার্থীদের মন খারাপ করার দরকার নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যুবকদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলো সব সময় গুরুত্ব দিয়ে দেখে। আশা করি এ বিষয়টিতেও সুবিবেচনার সিদ্ধান্ত আসবে।’
তবে এসংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বিষয়টি মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলার প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার চাইলে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটি যেহেতু নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়, তাই মন্ত্রিসভার অনুমোদন প্রয়োজন হতে পারে।’
সুত্রঃ কালের কন্ঠ