সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এবার একসঙ্গে নেয়া হচ্ছে না। রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থীর আবেদন ও পরীক্ষার হল সংকটের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই নিয়োগ পরীক্ষা শেষ করতে চায়। এ লক্ষ্যে ডিসেম্বরের মধ্যে লিখিত পরীক্ষা নেয়া শুরু হবে। জানুয়ারির মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন সরকারি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের পূর্ণকালীন হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালা চূড়ান্ত হলেই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি যুগান্তরকে বলেন, মামলার কারণে দীর্ঘদিন রাজস্ব খাতের শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যায়নি। তাই অনেক পদ শূন্য আছে। আমরা চাইব নতুন শিক্ষক যেন নতুন বছরে ক্লাসরুমে পাঠাতে পারি। সে লক্ষ্যে এ মাসের মধ্যেই সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর চিন্তাভাবনা ছিল। কিন্তু ওএমআর ফরমসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি কেনাকাটায় সরকারি ক্রয় আইন (পিপিআর) অনুসরণ করতে গিয়ে আমাদের গতি একটু কমে যাচ্ছে। তাছাড়া একসঙ্গে সারা দেশে পরীক্ষা নেয়া যাচ্ছে না। নভেম্বর মাসজুড়ে দুটি বড় পরীক্ষা আছে। তাই পরীক্ষা হল পাওয়া যাচ্ছে না। সবমিলিয়ে পরীক্ষা ডিসেম্বরে চলে যাচ্ছে। হল পাওয়া সাপেক্ষে ৩-৪টি করে জেলার পরীক্ষা একসঙ্গে নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে যাদের প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাদের স্থায়ী করা হবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২ হাজার শিক্ষক নিয়োগে ৩০ জুলাই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১-৩০ আগস্ট অনলাইনে আবেদন নেয়া হয়। মোট ২৪ লাখ ১ হাজার ৫৯৭ জন আবেদন করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) কর্মকর্তারা বলছেন, এর আগে সর্বশেষ নিয়োগে প্রায় ১২ লাখ প্রার্থী আবেদন করেছিল। সে হিসাবে এবার প্রার্থী দ্বিগুণ।
ডিপিই কর্মকর্তারা আরও জানান, সর্বশেষ নিয়োগে সারা দেশে ৩ হাজার ৬৬২ কেন্দ্রে পরীক্ষা নেয়া হয়। এবার দ্বিগুণ প্রার্থী হওয়ায় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। কিন্তু উপজেলা-জেলা পর্যায়ে এত কেন্দ্র পাওয়া কঠিন। এ কারণে উপজেলা সদরের কাছাকাছি পরীক্ষা কেন্দ্র নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেন্দ্র নির্বাচনের দায়িত্ব জেলা প্রশাসকদের দেয়া হয়েছে। এখন জেলা প্রশাসকরা কেন্দ্র ঠিক করে দিলে দুই তা ততোধিক জেলায় একসঙ্গে পরীক্ষা নেয়া হবে। এই পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয় ২০ সেট প্রশ্নপত্র তৈরি করবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগে এই নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরিসহ পরীক্ষা গ্রহণে নেতৃত্ব দিত ডিপিই। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে আরও কড়াকড়ি আনা এবং সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা আয়োজনে এবার প্রশ্ন নির্বাচন ও আসন বিন্যাস মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করে দেয়া হবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রণয়ন করা হবে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। ওএমআর ফরম ডিজাইন ও মূল্যায়ন, পরীক্ষার সময়সূচি, ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ ও প্রকাশ এবং পরীক্ষা কেন্দ্রের আসন বিন্যাসের পদ্ধতি উন্নয়ন বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, পরীক্ষার ব্যাপারে বুয়েটের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ওএমআর ফরম কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্র বাড়াতে এবার উপজেলা সদরের পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন্দ্র বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। কেন্দ্র নিশ্চিতকরণের দায়িত্ব প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে দেয়া হয়েছে। তারা প্রতিটি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্র বৃদ্ধি ও পরীক্ষা আয়োজনের জন্য সময় নির্ধারণ করবে। এরপর নিয়োগ পরীক্ষার সময় ঘোষণা করা হবে। একই সঙ্গে যদি সব জেলায় একসঙ্গে কেন্দ্র খালি না পাওয়া যায় তবে কয়েকটি জেলায় সমন্বয় করে পর্যায়ক্রমে নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন করা হতে পারে।
আকরাম আল-হোসেন আরও বলেন, এবার তিন ধাপের পরীক্ষার মাধ্যমে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার চিন্তা ছিল। কিন্তু সময়স্বল্পতার কারণে আগের মতোই দুই স্তরের পরীক্ষায় নিয়োগ করা হবে। সে অনুযায়ী ৮০ নম্বরে এমসিকিউ পদ্ধতির লিখিত পরীক্ষার পর ২০ নম্বরে ভাইভা নেয়া হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ফিজার বলেন, দীর্ঘদিন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় শিক্ষক সংকট তৈরি হয়েছে। তাই এই নিয়োগটি আমাদের দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন। সে কারণে পরীক্ষা পদ্ধতি বদলানো সম্ভব হয়নি। তবে প্রার্থীর আবেদনে ন্যূনতম যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক পাস থাকলেও বিদ্যমান পদ্ধতিতে মানসম্পন্ন প্রার্থীরাই নিয়োগ পাচ্ছে। গত কয়েক বছরের রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ প্রার্থীই স্নাতক ডিগ্রিধারী।
চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত নিয়োগ পাচ্ছেন : গত কয়েক মাসে চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলা বাদে সারা দেশে ১৭ হাজার সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলায় ৫ শতাধিক শিক্ষক আছেন প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পাওয়ার তালিকায়। এখন ওইসব শিক্ষককে স্থায়ীভাবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী যুগান্তরকে বলেন, জ্যেষ্ঠতার তালিকা অনুযায়ী আমরা ওই ১৭ হাজার শিক্ষককে চলতি দায়িত্ব দিয়েছিলাম। প্রধান শিক্ষকের পদ দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদাসম্পন্ন। এ পদে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ করতে হয়। কিন্তু একদিকে মামলা, আরেকদিকে নীতিমালা না থাকায় পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগে বিলম্ব হচ্ছিল। এ কারণে জ্যেষ্ঠতার তালিকা ধরে আমরা উপযুক্ত ব্যক্তিদের পদায়ন করেছিলাম। এখন এ সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পথে। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদন পেয়ে যাবে শিগগিরই। নতুন নীতিমালা প্রকাশিত হলে পদায়নকৃতদেরই স্থায়ী নিয়োগ দিতে পিএসসিতে সুপারিশ পাঠানো হবে। সূত্রঃযুগান্তর
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কখন কি বলছে তারা নিজেও জানে না। তাই আপনাদের উচিৎ পড়াশুনা করা পরীক্ষা তো কোন একদিন হবেই ।