আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘সহকারী শিক্ষক’ নিয়োগ পরীক্ষা পেছানো হচ্ছে। এ পরীক্ষা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ ছাড়া আগামী দু’মাসজুড়ে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা। এর পরপরই প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা চলবে। উপরোক্ত দু’টি কারণেই মূলত প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক পরীক্ষা পেছাতে পারে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র গতকাল নয়া দিগন্তকে নিশ্চিত করেছেন। ফলে আগামী ২৬ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের যে সম্ভাবনা ও পরিকল্পনা ছিল তা থেকে সরে এলো মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আকরাম আল হোসেনের সভাপতিত্বে ওই নিয়োগ কমিটির বৈঠকে গতকাল বিকেলে উপরোক্ত আলোচনা ও অঘোষিত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নয়া দিগন্তকে জানায়। তবে বৈঠক শেষে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) ড. মঞ্জুর কাদের নয়া দিগন্তকে বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কথা বলেছি। এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। বৈঠকে তারিখ নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। বৈঠকে যোগদানকারী আরেক অতিরিক্ত সচিব হাসিবুর রহমান বলেন, আমি বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম, তবে আমি কমিটির সদস্য নই। বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে কথা বলার যোগ্য ব্যক্তিও আমি না।
সচিব মো: আকরাম আল হোসেনের সভাপতিত্বে গতকাল বেলা ৩টায় মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বৈঠক শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলে। বৈঠক সম্পর্কে সচিব কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বৈঠকে নিয়োগ কমিটির সদস্যদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা অ্যাকাডেমি (নেপ) পরিচালকসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, পরীক্ষা গ্রহণের জন্য সব প্রস্তুতি নিতে ডিপিই, নেপসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্ব বণ্টনসহ নানা সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরীক্ষার ফল প্রস্তুতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আইসিটি বিভাগকে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
নিয়োগ পরীক্ষার ধরন নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, তবে চূড়ান্ত হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। পরীক্ষা যেহেতু এখনই হচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে আরো পর্যালোচনা এবং মতামত নেয়া হবে। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তও পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে।
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, নিয়োগ পরীক্ষার স্বচ্ছতা এবং যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা, প্রাথমিকে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে। মন্ত্রণালয়ের গতকালের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সবাই এ ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন।
মতামতের ভিত্তিতে, শিক্ষক নিয়োগে নতুন পদ্ধতি হিসেবে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যোগ্যদের বাছাই করতে প্রথমে একটি লিখিত পরীক্ষা নেবে মন্ত্রণালয়। এটি হবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এখানে যারা নির্বাচিত হবেন তাদের ফের নির্দিষ্ট নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। সেখানে যারা নির্বাচিত হবেন, তাদের চূড়ান্তভাবে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন হবে তা নির্ধারণের জন্য নেপকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সে পরীক্ষায় কী কী বিষয় থাকবে বা তাদের বাছাই করতে বিশেষ পরীক্ষার ধরন কী হবে তাও নেপ সুপারিশ করবে। ওই দু’টি পরীক্ষায় বাছাই ও ফলাফলের ভিত্তিতে আসনপ্রতি ৩ জনকে নির্বাচন করা হবে। এ তিনজনকেই মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হবে। সেখান থেকে একজনকে নেয়া হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সঙ্কট নিরসনে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প-৪ (পিইডিপি-৪) আওতাভুক্ত ১২ হাজার ‘সহকারী শিক্ষক’ নিয়োগের জন্য গত আগস্টে অনলাইনে আবেদন আহবান করা হয়। এতে সারা দেশে রেকর্ড সংখ্যক ২৪ লাখ ১ হাজার ৫৯৭ প্রার্থী আবেদন করেছেন। আগামী ২৬ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষা হতে পারে।
মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) কর্মকর্তারা জানান, এবার ১২ হাজার সহকারী শিক্ষক পদের বিপরীতে ২৪ লাখ ১ হাজার ৫৯৭টি আবেদন করায় নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন ও প্রশ্নফাঁস রোধ করাটা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। এ কারণেও পরীক্ষাপদ্ধতিতে পরিবর্তন এবং একাধিক দিনে পরীক্ষা এবং জেলা ভাগ ভাগ করে পরীক্ষা নেয়া হতে পারে। অতীতে এভাবে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের অভিজ্ঞতা রয়েছে ডিপিইর।
সূত্রঃ নয়া দিগন্ত