প্রথমেই আমি আমাদের  কিছু ভুল সিদ্ধান্ত বিষয়ে কথা বলবো।

১। অনার্সে ভর্তির পরে ৯০% শিক্ষার্থীদের চিন্তা চাকরির পড়া পড়তে হবে। এই চিন্তা করতে করতেই অনার্স শেষ হয়ে যায় কিন্তু চাকরির পড়া আর কোন দিন হয় না।

২। পড়া শুনা করে কি হবে সব চাকরিতে এখন ঘুষ দিলেই হয়! ঘুষ দিয়ে  আমাদের দেশে চাকরি হয় না, এইটা আমি বলবো না।  তবে আমার দৃষ্টিতে এইটা আপনি তখনই  বলতে পারবেন যখন যোগ্যতা দিয়েও আপনি চাকরি পাচ্ছেন না। আগে পড়া তার পরে এই চিন্তা।  এইটা কে অজুহাত দেখিয়ে পড়াশোনা  বাদ দিয়ে এই বুলি ফুটাইলে হবে না।

৩।  আমার দৃষ্টিতে  আমাদের একটা বড় রোগ আছে।  মাথায় এক চিন্তা কোন বই পড়বো,কোন শিট পড়লে ভাল হবে, ফেসবুকে কেউ হ্যান্ডনোট দিতে চাইলে মনে হয় সবাই তার পিছু ছাড়ে না। সব শেষে দেখা যায় নিজের কাছে যে বই আছে সেই বইটা মাসে একবারও খোলেনা।  তাই নিজের কাছে যে বই আছে আগে সেইটা শেষ করেন তার পরে অন্য বই এর চিন্তা করেন।

৪।পরীক্ষার ৩-৪ দিন আগে ভাই শর্ট সাজেশন হবে?? সত্যি বলতে এমন প্রশ্ন শুনলে আমার অনেক রাগ লাগে। ভাই আপনি চাকরির পরীক্ষা দিবেন আপনার কথা শুনে মনে হয় পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষার্থী  আপনি। এইটা চাকরির পরীক্ষা কোথায় থেকে কি প্রশ্ন দিবে এইটা বলার মত ক্ষমতা কারো নাই। সর্বোচ্চ আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় গুলো বলতে পারবে। তাই এই রকম ব্যাক্তিদের জন্য আমার মনে হয় পরীক্ষা দিয়ে টাকা নষ্ট করা ছাড়া কিছু নয়।

৫। প্লানিং সমস্যা- এইটা একটা বড় সমস্যা। অনেকেই এক সাথে ব্যাংক,বিসিএস,শিক্ষক নিয়োগ,মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা সহ  সব পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে একটা পরীক্ষার ও প্রস্তুতি ভাল ভাবে নিতে পারে না। তাই আপনাকে প্রথমে টার্গেট করতে হবে আপনি কি করবেন।

টার্গেট নির্বাচনঃ

বিসিএস- এই পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করেন আপনি পরীক্ষার জন্য কেমন সময় দিতে পারবেন তার পরে সিদ্ধান্ত নিবেন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পরীক্ষা এখানে টিকতে আপনাকে ৪-৫ ধাপ পার করতে হবে, এতো সহজ ভাবেন না।সব চেয়ে বড় বিষয় একটা চাকরির সবকিছু সম্পূর্ণ হতে কম করে হলেও ২ বছর চলে যাবে।

ব্যাংকঃ ব্যাংকের পরীক্ষা অনেক বেশি হয় এবং নিয়োগও বেশি তবে আপনাকে ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। সকল ব্যাংকের প্রশ্ন ইংরেজিতে হয়। ইংরেজিতে দক্ষ হলে এবং পড়াশোনা করলে আপনার জন্য একটা ভাল  সুযোগ হতে পারে।

শিক্ষক নিয়োগঃ এইটা সবাই ভাবে অনেক সহজ কিন্তু এইটাই সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। তবে মজার বিষয় ৬০% চাকরির পরীক্ষার্থী তেমন পড়াশোনা করে না । আর ৮০% পরীক্ষার্থীর চিন্তা দুর্নীতি।তাই এখানে আপনি অনেক সহজে ভাল ফলাফল করতে পারবেন। কারণ ৮০% যারা দুর্নীতির  চিন্তা করে তারা তেমন পড়াশোনায় মন দিতে পারে না। আর গত বছরের  পরীক্ষা থেকে আমরা এইটা দেখতে পেয়েছি দুর্নীতি করে চাকরি এখন অনেক কঠিন । তাই  যারা পড়াশোনা করে তাদের জন্য অনেক ভাল একটা সুযোগ আছে  । প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ছেলেদের পেতে হবে ৬৫-৭০ মার্ক এবং মেয়েদের ৬০-৬৫ মার্ক তা হলে চাকরি হবে।শিক্ষক নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ও আগের থেকে অনেক   ধাব এগিয়ে গিয়েছে । তাই আপনারা এই সুযোগ গুলো কাজে লাগাতে পারেন । এই দুইটা পরীক্ষার প্রশ্ন অনেকটা একই রকম হয়ে থাকে কারণ ৮০%  অধ্যায় মিল আছে । (এই বিষয়ে সহজে প্রস্তুতির জন্য আমরা সহজ পরিকল্পনা তৈরি করতেছি খুব দ্রুত প্রকাশ করা হবে )

মন্ত্রণালয়ের চাকরিঃ সবচেয়ে বেশি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হয়ে থাকে মন্ত্রণালয়ের চাকরির জন্য । তবে ৮০% নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির যোগ্যতা এসএসসি এবং এইচএসসি । তাই অনার্স পর্যন্ত অপেক্ষা করার কোন দরকার নাই। আপনি অনার্স প্রথম বছর থেকেই এই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি এবং আবেদন করতে পারেন।সরকারি চাকরির ক্ষেতে একটা বিষয় সবচেয়ে বেশি দেখা যায় একটা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে সেই নিয়োগের  পরীক্ষা হতে হতে কম করে হলেও ১ বছর চলে যাবে । অনেক পরীক্ষা দ্রুত হলেও বেশী ভাগ পরীক্ষা এমন এই হয়ে থাকে । যাদের ইচ্ছে এই চাকরি গুলো করবেন,  তাদের উচিৎ অনার্স পড়ার পাশা পাশি নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়া বা ভাল ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ ।(এই বিষয়ে সহজে প্রস্তুতির জন্য আমরা সহজ পরিকল্পনা তৈরি করতেছি খুব দ্রুত প্রকাশ করা হবে )

এই ভাবে আপনাকে প্রথমে টার্গেট করতে হবে আমি এই চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবো। একসাথে সব পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে বিপদে পরেন না । আর আমাদের সাথে যারা পরীক্ষা দিচ্ছেন তাদের ও বলতে চাই একটার বেশি প্রস্তুতি নিবেন না এবং পরীক্ষা ও দিবেন না । এখানে শুধু শুধু একাধিক পরীক্ষা দিয়ে কোন লাভ নাই । তাই আগে রুটিন অনুযায়ী ভালবে পড়ে প্রস্তুতি নিয়ে সেই অধ্যায়ের শুধু পরীক্ষা দিবেন । 

পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবেন কি ভাবে???

আমরা লাইফের প্রায় ২০ -২৫ বছর পর্যন্ত পড়াশোনা করে থাকি । আর আমাদের সব চেয়ে বেশি খারাপ লাগে পড়াশুনা করতে । কিন্তু আমাদের করার কিছু থাকে না, তাই বাধ্য হয়েই আমরা পড়াশোনা করে থাকি । মূলত ক্যারিয়ারের চিন্তার জন্য আমরা চাকরির পড়াশোনা করে থাকি । আপনাকে আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কি ধরণের চাকরি করবেন এবং আপনার কোন চাকরির প্রস্তুতির ধর্য্য আছে ।  তার আগে আপনাকে একটা বড় জিনিস চিন্তা করতে হবে আপনি এখন ছোট মানুষ না,  বড় হয়েছেন পরিবার থেকে বিভিন্ন ভাবে আপনার উপরে চাপ আসতে থাকবে । পড়াশোনা শেষ করে আপনি দেখতে পাবেন আপনার অনেক সময় পরিবার কে বিভিন্ন ভাবে দিতে হচ্ছে এবং আপনি পড়াশোনাতেও তেমন সময় দিতে পারছেন না । বড় বড় স্বপ্ন এবং চিন্তা করে লাভ অনেকটা কঠিন হয়ে যায়। এর মধ্যে আপনি সময় করে পড়াশুনা করেও যদি কোন চাকরিতে টিকতে না পারেন তা হলে হতাশায় আপনি নিজেই শেষ হয়ে যাবেন। এইটা একটা চরম বাস্তবতা ৮০% মানুষের লাইফে হয়ে থাকে । এই সব চিন্তা করে আপনাকে ক্যারিয়ারের পরিকল্পনা করতে হবে।

আপনার যদি অধিক সময় এবং বেকার থাকলেও তেমন কোন সমস্যা না হয়   এবং আপনার হাতে ২বছর বা বেশি সময় থাকে তা হলে আপনি বিসিএস দিতে পারেন। অনেকে ভাবতে পারে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলে অন্য চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি হয়ে যাবে । তাদের কে আমি বলতে চাই অনেকটা  হয়ে যাবে কিন্তু এইটা অনেকটা এমন হলো সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ,পুকুর পাড়ি দেওয়া । তবে  দুইটার পরিবেশ কিন্তু এক না । বিসিএস আপনাকে অনেক পড়তে হবে সাথে আপনাকে অনেক বেশি মনে রাখতে হবে কিন্তু অন্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে আপনাকে কম পড়তে হবে এবং বেশি মনে রাখতে হবে এইটাই বড় পার্থক্য । আপনি সমান্য কিছু অধ্যায় যদি পড়াশোনা করে পরীক্ষা দেন সেইটা কেমন হবে , আর আপনি অনেক গুলো অধ্যায় পড়ে পরীক্ষা দেন সেইটা কেমন হবে এইটাই চাকরির জন্য একটা বড় বিষয়।

ব্যাংকের পরীক্ষাঃ  এখানে আগেই আমরা বলেছি ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে।বিভিন্ন ব্যাংকের পরীক্ষাতে যে প্রশ্ন গুলো এসেছে সেই গুলো আপনাকে প্রথমে শেষ করতে হবে । তার পরে আপনাকে ব্যাংকের জন্য যে অধ্যায় গুলো সিলেবাসে আছে সেই অধ্যায় গুলো বিভিন্ন বই থেকে পড়তে হবে ।

শিক্ষক নিয়োগ ও মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আপনাকে সব চেয়ে বেশি অতীতের বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় যে প্রশ্ন গুলো এসেছে সেই প্রশ্ন গুলো দেখতে হবে । প্রথমে আপনাকে পরীক্ষার সিলেবাস দেখতে হবে তার পরে আপনি সেই  অধ্যায় গুলোর ভাল ভাবে পড়বেন এবং সাথে অধ্যায়ের শেষে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার   যে প্রশ্ন আছে সেই গুলো পড়লে আপনি এখান থেকে অনেক প্রশ্ন কমন পাবেন। বেশি ভাগ পরীক্ষার্থীদের গণিত সমস্যা হয়ে থাকে তবে আপনি যে কোন গণিত বই পড়াশুনা করলে আপনি ৯০%  গণিত কমন পাবেন প্রতিটা অধ্যায়ে ১০০-১৫০টা করে গণিত প্রশ্ন থাকবে । পাটিগণিত অধ্যায় পাবেন ৭-৮টা এবং  বীজগণিত পাবেন ৩-৪।এই তিনটা পরীক্ষায় বেশি ভাগ অধ্যায় একই রকম তাই আলাদা ভাবে পড়াশোনা না করে প্রথমে যে কোন একটা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবেন । তার পরে অতিরিক্ত যে অধ্যায় গুলো আছে সেই গুলো শেষ করবেন ।

পড়বেন কি ভাবেঃ

বিসিএস পড়ার পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে সিলেবাস দেখতে হবে কত অধ্যায় আছে । প্রতিটা অধ্যায় এক দিন করে পড়লে কি আপনি শেষ করতে পারবেন না কি বেশি পড়তে হবে এইটা আগে দেখতে হবে। তার পরে আপনি ভাগ করে নিবেন কোন অধ্যায় কোন দিন পড়বেন। যে অধ্যায় গুলো পড়বেন এমন ভাবে পড়বেন যে আপনি ভুলে না যান। তার পরে শেষ হলে আপনি দেখবেন কোন অধ্যায় গুলো ভুলে যাচ্ছেন সেই অধ্যায় গুলো বেশি পড়বেন ।

ব্যাংকের ক্ষেতেও আপনাকে অধ্যায় গুলো ভাগ করে  আগে শেষ করতে হবে তার পরে যে অধ্যায় বা প্রশ্ন গুলো  আপনি মনে রাখতে পারছেন না তা নির্বাচন করে বেশি পড়বেন। সাথে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের প্রশ্নগুলো ভাল ভাবে দেখতে হবে ।

শিক্ষক নিয়োগ বা মন্ত্রণালয়ের পড়ার বিষয় গুলো আপনাকে  অধ্যায় ভিত্তিক ভাগ করে প্রথমে শেষ করতে হবে  ,  তার পরে যে অধ্যায় বা প্রশ্ন গুলো  আপনি মনে রাখতে পারছেন না তা নির্বাচন করে বেশি পড়বেন।

[বি: দ্রঃ] কেউ একদিনে বই শেষ করার চিন্তা করবেন না। আর একটা পরিকল্পনা ছাড়া আপনি এলোমেলো পড়াশোনা করবেন না।

পড়ি কিন্তু কিছু মনে থাকে নাঃ

এইটা আপনার না শুধু , সবার সমস্যা ।কারণ একদিনে আমরা অনেক পড়াশুনা করি কিন্তু পড়লেই শুধু হবে না, মনে রাখতে ও হবে , না হলে পড়ার কোন মূল্য  থাকবে না।এই বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আরো আলোচনা করবো সাথেই  সহজে কি ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায় সেই বিষয়েও আলোচনা করবো ।

এই পোস্টটি  এই জন্য দেওয়া হলো যাতে আপনি সহজে আপনার পড়ার টার্গেট নির্বাচন  করতে পারেন । আপনি কোন চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবেন এইটাই বড় বিষয় । শুধু শুধু আবেগ দিয়ে ৫০% চাকরির পরীক্ষার্থী বিসিএস পরীক্ষার আবেদন করে । চাকরি একটা যুদ্ধের থেকে কোন অংশেই কম না । তাই আবেগ দিয়ে নয় আপনার প্রস্তুতি  , পড়ার সময় এবং  আপনার কনফিডেন্স লেভেল  দিয়ে আপনাকে চাকরি নামক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে । যুদ্ধের মাঝ খানে গিয়ে যদি সিদ্ধান্ত নেন  আমি যুদ্ধ করবো না ,তা হলে যুদ্ধে সৈনিকের যে পরিণতি হয় আপনারও তাই হবে । তাই আপনাদের আবারও বলতে চাই প্রথমে টার্গেট নির্বাচন করেন ।এক পরিকল্পনার মধ্যে অন্যটা যোগ করবেন না । 

কোন ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।