বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ভালো এবং সৎ উদ্দেশ্যে তৈরি হলেও এর কার্যকম নিয়ে দেশের চাকরির প্রার্থীদের অভিযোগের শেষ নাই । যদিও এই বিষয়ে কথা বলার ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু তাদের বর্তমান কার্যকম দেখে না বলে থাকতে পারলাম না।

প্রথমে পার্থক্য ম্যানেজিক কমিটি VS এনটিআরসিএ 

১। ম্যানেজিক কমিটি প্রতিটা পদের চাকরির জন্য গড় ২ থেকে ৪ লক্ষ টাকা নিয়ে চাকরি দিতো , থাকতো স্বজনপ্রীতি ।
২। এনটিআরসিএ চাকরি না দিতেই সাধারণ প্রার্থীদের থেকেই আবেদন ফি বাবদ ২৫-২৮ কোটি নিয়ে নেয় । প্রতি বছর স্কুল পর্যায়, স্কুল পর্যায়-২ ,কলেজ মিলে আবেদন হয় প্রায় ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৩ জন প্রার্থী(২০১৮সালের পরীক্ষায়) । আবেদন ফি ৩৫০টাকা।

৩। আবার চাহিদা পাওয়ার পরে ১ থেকে ১৪তম  পর্যন্ত পাশ কারি প্রার্থীরা প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন বাবদ ফি দিয়ে থাকে ১৮০টাকা। ২০১৮ সালে ২৪ লাখের কিছু বেশি প্রার্থী আবেদন ফি বাবদ অর্থ জমা দিয়েছেন। ৪৩কোটি ২লাখ টাকা।

খরচের হিসাবঃ

৩-৪ বছরের নিয়োগ না হওয়ায় ১ বছরে নিয়োগ দিতে পেরেছে ৩৯ হাজার । আর আবেদন ফি নিয়েছে ৪৩কোটি সাথে নিয়োগ পরীক্ষা বাবদ ২০১৮ সালে ফি নিয়েছে ২৮কোটি= ৭১কোটি টাকা

১-১৪তম পর্যন্ত নিয়োগ পরীক্ষা বাবদ ফি নিয়েছে প্রতিটায় ৫লাখ ৫০ হাজার প্রার্থী ধরলাম মোট ১৪টা পরীক্ষায় 168কোটি টাকার বেশি গিয়েছে।

তা হলে মোট টাকা ৭১কোটি+ ১৬৮কোটি= ২৩৯কোটি টাকা ।

এই টাকায় নিয়োগ দিয়েছে ৩৯০০০ হাজার তাও চার বছর পরে আর ম্যানেজিক কমিটি ২লাখ টাকা করে নিলে নিতো ৭৮০কোটি আর এনটিআরসিএ তাদের ৩ভাগের এক ভাগ তো নিচ্ছেই তা হলে লাভ কি হলো?? শিক্ষক সংকট ,শিক্ষার মান খারাপ আরো অনেক সমস্যা তো আছেই।
অন্যান্য খরচঃ
একজন প্রার্থীকে আবেদন ফি বাবদ কম করে হলেও ৩০টাকা ফি দিতে হবে । নিয়োগ পরীক্ষার হয়রানি  ৩ধাপে পরীক্ষা দিতে গিয়ে খরচ সহ সকল খরচ হিসাব করলে দেখা যাবে এনটিআরসিএ তার তিন গুন বেশি খরচ করে নিচ্ছে ।কারণ একজন প্রার্থীর বিভাগীয় পর্যায়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে ব্যয় হবে ১০০০-১৫০০টাকা সর্ব নিম্ন। 

প্রার্থীদের হয়রানিঃ  

১। নিদিষ্ট কোন পরিকল্পনা নাই। নিয়োগ প্রক্রিয়া এলোমেলো।  ১২তম নিবন্ধনের আগে যারা পরীক্ষা দিয়েছে তারা শুধু পাশের জন্য পরীক্ষা দিয়েছে কারণ তখন এতো নিয়ম ছিল না। এমন কি তাদের ভাইভাও ছিল না। তাদের নিয়োগ হবে কি ভাবে?? 

২। যারা ভাইভা দিচ্ছে তাদের রেজাল্ট অনেক ভাল হবে এবং আগের প্রার্থীদের সাথে রেজাল্টের দিক থেকে মিল থাকবে না। তা হলে আগের খারাপ রেজাল্ট কারিদের কি হবে? 

৩। প্রতিবছর জাতীয় মেধা তালিকা হচ্ছে ফলে গতবছর যার মেধা তালিকা ১০০তে ছিল সে এই বছর চলে যাবে কম করে হলেও ৪০০+ । এই ভাবে চলতে থাকলে কি আগের প্রার্থী কোন দিন নিয়োগ পাবে??  

৪। কোন কারণ ছাড়াই এক বছরে দুইটা নিয়োগ । এই নিয়োগ দিয়ে সবচেয়ে বেশি খেলা করেছে এনটিআরসিএ। মনে হচ্ছে স্কুল , কলেজে শিক্ষকের চাহিদার শেষ নাই !যে এক বছরে ৫টা করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। আগের ১০ লাখ+  প্রার্থীদের মধ্যে থেকে এখন পর্যন্ত ৬০হাজের বেশি নিয়োগ দিতে পারে নাই তার পরেও আবার একটা নিয়োগ পরীক্ষা শেষ না হতেই আবার নিয়োগ??? এই সব প্রার্থীদের দিয়ে কি ঘাস কাটবে এনটিআরসিএ । তারা না কি বিসিএস এর মত করে নিয়োগ পরীক্ষা নিচ্ছে। বিসিএস যে নিয়োগের চাহিদা পাওয়ার পরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সেইটা এনটিআরসিএ ভুলে গিয়েছে। 

৫। নিয়োগ পরীক্ষায় MCQ  যারা পাশ করেছে তাদের কাগজ জমা দেওয়ার তারিখ দিবে ঠিক ঈদের আগে। আর বলবে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত করতে হবে সকল কাগজ।এইটা দেখে সব চেয়ে বেশি রাগ লাগছে। তারা মনে করে প্রতিটা ঘরে ঘরে একজন করে বিসিএস ক্যাডার বসে আছে সত্যায়িত করার জন্য। ঈদের ছুটিতে সকল কলেজও বন্ধ, শিক্ষক সব আসবে ২২ তারিখের পরে।তার পরে  এমনও ইউনিয়ন আছে যে খানে ১-২টা ক্যাডার খুঁজে পাওয়াই কঠিন এবং সকল ক্যাডার শহরে থাকে, কলেজ বন্ধ এখন সকল প্রার্থী কাগজ সত্যায়িত করতে ভিখারির  মত ক্যাডারের বাড়ি বাড়ি ঘোরা শুরু করেছে এমন কি একজন ক্যাডারের বাড়ী খোঁজা আরো বেশি কঠিন । এইটাও কম হয়রানি নয়! 

৬। ১৫তম হার্ডকপি ডাউনলোড ওয়েবসাইট থেকে বন্ধ করে দিয়েছিল । যদিও পরে সুযোগ দিয়েছে কিন্তু এইটাও তারা হয়রানি করেছে।  

৭।১৫তম এবং ১৬তম  বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে দেখা দিয়েছে শেষের দিনে আবেদন করা যায়নি। এমন কি আজ বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১৬তম  আবেদনের শেষ তারিখ হলেও ১৯ তারিখ রাতেই আবেদন বন্ধ করেছে। হায়রে কপাল এইটা আরো কত বড় হয়রানি!

৮। সব চেয়ে বড় হয়রানী প্রতিবছর গড় নিয়োগ হবে ১০হাজার+ আর চাকরির প্রার্থীদের সংখ্যা খুব তারা তারি পাহাড়ের সমান হয়ে যাবে। 

৯। এনটিআরসিএ সর্বশেষ একটি নিয়োগ সম্পন্ন করে বছরে একবার সম্মিলিত মেধা তালিকা আপডেট করবে। যারা এখনও নিয়োগ পান নি ,তারা এইটার কথা ভুলে যান কারণ ১৫তম এবং ১৬তম নতুন প্রার্থী আসলে আপনার জাতীয় মেধা তালিকা কম করে হলেও ৪০০বেড়ে যাবে।

১০। আবার মেধা তালিকায় আপনি ১০ থেকে নিয়োগ পাবেন না!  যদি আপনি যে ৯টা প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছেন সেখানে ১-৯মেধা তালিকার কেউ আবেদন করে তা হলে আপনি শেষ। আবার আপনি মেধা তালিকায় ৫০০থেকেও নিয়োগ পাবেন যদি সেখানে তালিকার ৫০০পরের সবাই আবেদন করে । তাহলে জাতীয় মেধা তালিকা কি ভাবে কাজে দিচ্ছে???? এখানে ১ম ও যা ১০০০তম ও তাই মেধা তালিকার কোন কাজ নাই ।  প্রার্থীদের সাথে এনটিআরসিএ খেলা করছে । প্রার্থীদের গণক হতে হবে দেখি? এনটিআরসিএ এর কোন চিন্তা নাই কে নিয়োগ পাচ্ছে আর কে পাচ্ছে না । তাদের টাকা তো ঠিক আসতিছে। 


****সব চেয়ে বড় কথা তারা তিন ধাপে পরীক্ষা নিয়ে তালিকা করেই যাচ্ছে এইটা কোন কাজে লাগছে? নিয়োগ দিবে ১০জন কে আর দাড়িয়ে রেখেছে ৫হাজার জন কে ?? নিয়োগ ব্যবসা না করে,নিয়োগের চাহিদা অনুযায়ী নিয়োগ পরীক্ষা হলে ,তাও কথা ছিল। এক কজের জন্য ২বার টাকা নেওয়ার ফাঁদ পেতে বসে আছে এনটিআরসিএ।

বিঃদ্রঃ ১৬তম নিবন্ধনের আবেদনের শেষ সময়ের আগেই ওয়েবসাইটে আবেদনের সময় শেষ করে দিয়েছে।