মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর অধীন সরকারি স্কুল-কলেজের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে নিয়োগ দিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল ২০১৩ সালের ৭ মার্চ। ইতিমধ্যে গত ছয় বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। আর এই সময়ে শূন্য হয়েছে আরো দুই হাজারের বেশি পদ। অথচ নানা জটিলতায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি শিক্ষাবিভাগ।
শুরুতে বাধা পড়েছিল নিয়োগে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি। সর্বশেষ আটকে আছে আইনি জটিলতায়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়া গেলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা যাবে এমনটি জানিয়েছে মাউশি।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে এক হাজার ৯৬৫ জন কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় একই বছরেই। কিন্তু পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠে, প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। মাউশি অধিদপ্তরের একটি সিন্ডিকেট এই টাকা সংগ্রহ করে। মাউশির শীর্ষ কর্মকর্তাকেও দায়ী করা হয়। কিন্তু এসব অভিযোগ উপেক্ষা করে মাউশি। নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু অভিযোগ আমলে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয় ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দেয়।
পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি অধিদপ্তর এই নিয়োগ নিয়ে একাধিক চিঠি চালাচালি করে। তখন নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এভাবে চার বছর পার হয়ে যায়। এরপর ২০১৭ সালে নতুন করে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই পরীক্ষার মাধ্যমে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের ফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু দেড় বছর পার হলেও চতুর্থ শ্রেণির ৯৮৭ জন কর্মচারী নিয়োগের ফল দিতে পারেনি শিক্ষাবিভাগ। জানা যায়, নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা ৯৮৭ পদ বাদেই গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২২০১ পদ ফাঁকা রয়েছে। পদ শূন্য থাকায় স্কুল ও কলেজে দাপ্তরিক ভোগান্তি হচ্ছে।
মাউশি জানায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মাউশি মহাপরিচালক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেন। সেখানে বলা হয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে নো ওয়ার্ক নো পে’র ভিত্তিতে স্কুল-কলেজে কর্মরত কর্মচারীদের ৪৮টি রিট মামলা বিচারাধীন আছে। যাতে রিট পিটিশনার ২২০২ জন। একটি মামলার রায়ে সুপ্রীম কোর্ট উভয়পক্ষকে আপীল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বহাল রাখার আদেশ প্রদান করেছে। আমাদের পক্ষ থেকে দ্রুত মামলার শুনানির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে অনুরোধ করা হয়েছে। এই ৯৮৭টি পদ ছাড়াও বর্তমানে আরো ২২০১টি পদ শূন্য আছে।
এই চিঠির প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ১৮ মার্চ আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রিট পিটিশনারদের সংখ্যা যেহেতু ২২০২ জন। আর যেহেতু ৯৮৭টি পদ বাদেও ২২০১টি পদ শূন্য রয়েছে। তাই ৯৮৭ পদে নিয়োগ প্রদানসহ অন্য পদেও নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করা যাবে কিনা সে বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে।
মাউশির উপ-পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা এনামুল হক হাওলাদার বলেন, আমরা বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। তারা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে। মতামত পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্রঃ ইত্তেফাক