সকল সরকারি চাকরির তথ্য সবার আগে মোবাইলে নোটিফিকেশন পেতে ডাউনলোড করুন
Android App: Jobs Exam Alert

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা: মেধার লড়াই নাকি 'প্রশ্ন ফাঁসের' মহোৎসব?

এক সময় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীদের মাঝে ছিল প্রস্তুতির তুমুল ব্যস্ততা। কোন বিষয় থেকে প্রশ্ন কমন আসবে, কীভাবে পড়লে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া যাবে—এসব নিয়েই ছিল তাদের মূল ভাবনা। কিন্তু বর্তমান চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন প্রস্তুতির চেয়ে পরীক্ষার্থীদের বেশি মনোযোগ 'প্রশ্ন ফাঁসে'। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন পড়ার টেবিল নয়, বরং প্রশ্ন কত টাকায় পাওয়া যাবে বা পদের নিলাম কত উঠেছে তা নিয়ে। শোনা যাচ্ছে, একেকটি পদের জন্য ১৫-২০ লাখ টাকার লেনদেন চলছে। তবে বাস্তবতা বলছে, অতিরিক্ত শীতের কারণে প্রশ্ন ফাঁসের চেয়েও বেশি সক্রিয় থাকবে মোবাইল ও ডিভাইসভিত্তিক দুর্নীতি।

কেন প্রশ্ন ফাঁসে এত আগ্রহ? দায়ী কে?

এর মূল দায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন—কেন?

এর প্রধান কারণ হলো যথাযথ প্রস্তুতির সময় না দিয়েই দ্রুত পরীক্ষা নেওয়া। যারা প্রস্তুতি নিতে পারেনি, তাদের মধ্যে প্রশ্ন ফাঁসের প্রতি আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে নতুন অনার্স পাস করা প্রার্থীদের আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পড়াশোনার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি। ফলে তারা প্রশ্ন ফাঁসের কথা ভাববে না তো কী করবে? প্রস্তুতির এই 'অভাব' অনেককে অসদুপায় অবলম্বনে উৎসাহিত করছে। মানুষ যখন অভাবী হয়, তখনই চুরির পথ বেছে নেয়; অধিদপ্তর এখানে সময়ের অভাব তৈরি করে মেধা ও সততার সংকট তৈরি করেছে।ফলে প্রশ্ন ফাঁসকে তারা আর অপরাধ হিসেবেই দেখছে না।

  • আগের পরীক্ষার প্রভাব: গত ২৬ তারিখের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের খবরের পর সাধারণ পরীক্ষার্থীদের মাঝে এই বিশ্বাস জন্মেছে যে—পড়াশোনা করে নয়, প্রশ্ন পেলেই সফল হওয়া সম্ভব। ফলে যারা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, তারাও এখন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে মরিয়া হয়ে প্রশ্নের পেছনে ছুটছেন।
  • অব্যবস্থাপনার ছাপ: ২ তারিখের পরীক্ষার জন্য ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রুতিলেখক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ হাতে মাত্র একদিন সময়! এছাড়া বড় একটি অংশ এখনো এডমিট কার্ডের এসএমএস পায়নি। এই তাড়াহুড়ো ও এলোমেলো সিদ্ধান্ত অধিদপ্তরের অগোছালো প্রস্তুতিরই বহিঃপ্রকাশ।

পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তাড়াহুড়ো ও এলোমেলো একক সিদ্ধান্তে চাকরির প্রার্থীদের ভোগান্তিতে ফেললে এর সম্পূর্ণ দায়ভার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকেই নিতে হবে।

ডিজিটাল জালিয়াতি ও 'ডিভাইস পার্টি'র দাপট:

তীব্র শীতের কারণে শরীরে ডিভাইস বা মোবাইল লুকিয়ে রাখা সহজ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে এবার প্রশ্ন ফাঁসের পাশাপাশি 'ডিভাইস পার্টি' বা প্রযুক্তিনির্ভর জালিয়াতির ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে। জেলা পর্যায়ে এই জালিয়াতি ঠেকানো প্রায় অসম্ভব বলে অনেক পরীক্ষার্থী মনে করছেন।

প্রশ্ন ফাঁস বা ডিভাইসভিত্তিক দুর্নীতি হলে কী হবে?

যদি এবারের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস বা বড় কোনো জালিয়াতির খবর সামনে আসে, তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চরম সংকটে পড়বে। সারা বাংলাদেশে একসঙ্গে পরীক্ষা নেওয়ার কারণে বিষয়টি আরও বেশি আলোচনায় আসবে। ঢাকায় এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। যেখানে ৭০–৮০% চাকরিপ্রার্থী আগে থেকেই বিরোধিতা করছে, সেখানে সামান্য একটি ঘটনাও বড় আন্দোলনে রূপ নিতে পারে। নির্বাচন-পূর্ব সময়ে এটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জন্য বড় সংকট তৈরি করবে।

শেষ কথা: যেখানে অর্ধেকের বেশি পরীক্ষার্থীর মাথায় দুর্নীতির চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, সেখানে প্রথাগত নিরাপত্তা দিয়ে জালিয়াতি ঠেকানো কঠিন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যদি ফোন কল ট্র্যাক করে, তবে বর্তমান পরিস্থিতির ভয়াবহতা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। এই বাস্তবতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর যদি সময়োপযোগী এবং সুশৃঙ্খল পদক্ষেপ না নেয়, তবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি শুধু প্রশ্নবিদ্ধই হবে না, বরং যোগ্য শিক্ষক পাওয়ার পথও রুদ্ধ হয়ে যাবে। রাষ্ট্রকে চোর হতে বাধ্য করার এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।