সকল সরকারি চাকরির তথ্য সবার আগে মোবাইলে নোটিফিকেশন পেতে ডাউনলোড করুন
Android App: Jobs Exam Alert

খাদ্য অধিদপ্তরের চাকরির পরীক্ষায় অভিনব পদ্ধতিতে জালিয়াতির চেষ্টার সময় এক পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। পরীক্ষা কক্ষে বারবার কাশি দিয়ে বাইরে থাকা চক্রকে প্রশ্নপত্রের সেট কোড জানানোর কথা ছিল তাঁর। কিন্তু বিষয়টি বুঝতে না পারায় বারবার কাশি দিতে থাকেন তিনি, যা সন্দেহ তৈরি করে। পরে তল্লাশি চালিয়ে তাঁর কান ও গেঞ্জির ভেতর থেকে ক্ষুদ্রাকৃতির ডিজিটাল ডিভাইস উদ্ধার করা হয়।

ঘটনাটি ঘটে আজ শনিবার সকালে দিনাজপুর শহরের কেরী মেমোরিয়াল হাইস্কুল কেন্দ্রে, যেখানে খাদ্য অধিদপ্তরের ‘উপখাদ্য পরিদর্শক’ পদের পরীক্ষা চলছিল। আটক পরীক্ষার্থীর নাম কৃষ্ণকান্ত রায়, তিনি বিরল উপজেলার বাসিন্দা।

যেভাবে ধরা পড়লেন:

পুলিশ জানায়, তাদের কাছে আগে থেকেই ওই কেন্দ্রে ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতির তথ্য ছিল। পরীক্ষার সময় ১০১ নম্বর কক্ষে কৃষ্ণকান্ত রায়ের বারবার কাশি দেওয়াটা অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় তাঁকে নজরদারিতে রাখা হয়। পরীক্ষা শেষে তাঁকে তল্লাশি করলে কানের ভেতরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় লাগানো একটি ক্ষুদ্র ডিভাইস এবং স্যান্ডো গেঞ্জির সঙ্গে সেঁটে রাখা আরেকটি ডিভাইস পাওয়া যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে কৃষ্ণকান্ত স্বীকার করেন, ঢাকার একটি চক্রের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে তিনি এই ডিভাইসগুলো নিয়েছিলেন। চুক্তি অনুযায়ী, প্রশ্নপত্রের সেট ‘পদ্মা’ হলে কাশি দিয়ে সংকেত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিষয়টি ঠিকমতো বুঝতে না পারায় তিনি বারবার কাশি দিতে থাকেন এবং পরিদর্শকদের নজরে পড়ে যান।

বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য:

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক পরীক্ষার্থী দাবি করেছেন, এই চক্রটি দেড় থেকে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে জালিয়াতির ব্যবস্থা করে। শুধু কৃষ্ণকান্ত নন, দিনাজপুরের বিভিন্ন কেন্দ্রে অন্তত ৫৫ জন পরীক্ষার্থী একই পদ্ধতিতে ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন।

তিনি জালিয়াতির প্রক্রিয়া বর্ণনা করে বলেন, পরীক্ষা শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যে প্রশ্নপত্রের ছবি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে চক্রের কাছে চলে যায়। শহরের দুটি ছাত্রাবাসে বসে কোচিং সেন্টারের শিক্ষকেরা দ্রুত সেই প্রশ্নের উত্তর তৈরি করেন। এরপর পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে কাশির সংকেতের মাধ্যমে সেট কোড জেনে নিয়ে ডিভাইসের মাধ্যমে ক্রম অনুযায়ী উত্তরগুলো (ক, খ, গ, ঘ) বলে দেওয়া হয়।

তাঁর আরও দাবি, এই চক্রের সঙ্গে স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষক এবং প্রশাসনেরও কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারেন। কারণ, লিখিত পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার পর ভাইভায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করতে পরীক্ষার্থী প্রতি ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার চুক্তি করা হয়।

প্রশাসনের বক্তব্য:

দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাবিবুল হাসান জানান, "আমরা একজনকে হাতেনাতে আটক করেছি। এটি একটি বড় চক্র বলে ধারণা করা হচ্ছে। আটক পরীক্ষার্থীর ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলছে।"