নেপালের রাজনীতিতে সম্প্রতি এক বড় পরিবর্তন এসেছে। ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছেন। এই ঘটনা নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যেখানে তরুণ প্রজন্মের (জেন-জি) প্রতিবাদ একটি সরকারের পতন ঘটিয়েছে। এই রাজনৈতিক সংকট কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার প্রতিবাদ হিসেবে শুরু হলেও, শেষ পর্যন্ত এটি দুর্নীতি এবং সামগ্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক ব্যাপক গণআন্দোলনে রূপ নেয়।
প্রধান ঘটনাবলী:
- বিক্ষোভের সূচনা: সরকারের পক্ষ থেকে কিছু অনিবন্ধিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে নেপালের তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে জেন-জি, রাস্তায় নেমে আসে। এই বিক্ষোভ প্রাথমিকভাবে কাঠমান্ডুতে শুরু হলেও দ্রুত দেশের অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
- সহিংসতা: শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ একপর্যায়ে সহিংস রূপ ধারণ করে। বিক্ষোভকারীরা নেপালের পার্লামেন্ট ভবন, রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি এবং দলীয় কার্যালয়ে আগুন দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালালে বহু বিক্ষোভকারী নিহত হন, যার মধ্যে শিক্ষার্থীও ছিল। এই ঘটনায় ক্ষোভ আরও বাড়ে এবং আন্দোলন সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়।
- প্রধানমন্ত্রী ওলির পদত্যাগ: পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ায় এবং নিজ দলের ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সমর্থন হারানোর পর কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এটি তার চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীত্বের মেয়াদ ছিল।
- আন্তর্জাতিক প্রভাব: চলমান বিক্ষোভের কারণে সৃষ্ট নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিমানবন্দরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
কেপি শর্মা ওলির রাজনৈতিক জীবন:
- পদত্যাগকারী প্রধানমন্ত্রী: কেপি শর্মা ওলি। তিনি ছিলেন একজন অভিজ্ঞ কমিউনিস্ট নেতা।
- প্রধানমন্ত্রীত্বের মেয়াদ: তিনি বিভিন্ন সময়ে চারবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন: ২০১৫-১৬, ২০১৮-২১, এবং ২০২১ সালে আরও দুইবার।
- প্রভাব: কেপি শর্মা ওলি তার দৃঢ়চেতা এবং জাতীয়তাবাদী নীতির জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অস্থিরতা এবং কর্তৃত্ববাদী আচরণের অভিযোগ ওঠে।
মূল বিষয় যা পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ:
- নেপালের পদত্যাগকারী প্রধানমন্ত্রীর নাম: কেপি শর্মা ওলি।
- বিক্ষোভের মূল কারণ: অনিবন্ধিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়া, যা পরবর্তীতে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনে রূপ নেয়।
- বিক্ষোভে অংশ নেওয়া প্রধান গোষ্ঠী: জেন-জি বা তরুণ প্রজন্ম।
- আন্দোলনের ফলাফল: কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগ, ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা এবং দেশে নিরাপত্তা বাহিনীর মোতায়েন।
