করোনাকালে প্রণোদনা হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২ করার দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে এ মানববন্ধন করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।
চাকরিপ্রত্যাশীদের ভাষ্য, যুবপ্রজন্ম বর্তমান করোনাকালে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত। প্রায় দেড় বছর হতে চলেছে অতিমারি করোনার জন্য উল্লেখযোগ্য সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি নেই, চাকরির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার মতো পরিবেশও নেই। সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের জীবন থেকে প্রায় দুটি বছর হারাতে চলেছে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ হওয়ায় দেড় লাখ মানুষ চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ না পেয়েই ৩০-এর গণ্ডি অতিক্রম করবেন। যে ছেলেমেয়েরা ২৬ বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শেষ করে সেই করোনা শুরুর সময় থেকে আশায় বসে আছেন চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবেন, তাঁরাও এ দেড় বছর হারাতে চলেছেন।
চাকরিপ্রত্যাশীরা মানববন্ধনে বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষবারের মতো বৃদ্ধি করে ২৭ থেকে ৩০ করা হয় ১৯৯১ সালে, যখন গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। এ ৩০ বছরে গড় আয়ু ১৬ বছর বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছরে উন্নীত হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি হয়নি। অন্যদিকে, ২০১১ সালে অবসরের বয়সসীমা ২ বছর বৃদ্ধি করে ৫৭ থেকে ৫৯ করা হয়েছে (সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৬০)। অবসরের বয়স ২ বছর বৃদ্ধি হওয়ায় চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২ বছর বৃদ্ধি পেলে সেটা আর সাংঘর্ষিক হওয়ার সুযোগ থাকে না। সিপিডি, পিআরআইসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় দেখা যায়, করোনায় বেকারত্বের হার ২০ থেকে বেড়ে ৩৫ শতাংশ হয়েছে। এডিবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার প্রথম ছয় মাস সার্কুলার হয়েছে আগের বছরের এপ্রিল থেকে ৮৭ শতাংশ কম। সরকারি নিয়ম অনুসরণের কারণে বেসরকারি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোয় ৩০ বছরের বেশি এমন জনবল (অভিজ্ঞতা) ছাড়া নিয়োগ দেওয়া হয় না। ফলে বেসরকারি চাকরিতেও সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে।
চাকরিপ্রত্যাশীদের দাবি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো উল্লেখযোগ্য সেশনজট বিদ্যমান, যার অন্যতম উদাহরণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়–অধিভুক্ত সাত কলেজ। মাস্টার্স সম্পন্ন করতে যেখানে গড়ে ২৬ বছরের অধিক সময়ও লেগে যায়, সেখানে করোনার জন্য আরও ২ বছর হারানো যুবপ্রজন্মের জন্য অশনিসংকেত বহন করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ বা আবেদনের বয়সসীমা ৩০ হলেও সহকারী বিচারকদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩২, আবার বিসিএস স্বাস্থ্য তথা সরকারি ডাক্তারদের ক্ষেত্রেও ৩২। অন্যদিকে, বিভিন্ন কোটার ক্ষেত্রে এ বয়সসীমা ৩২ বছর পরিলক্ষিত হয়।
কর্মসূচির মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি ও স্মারকলিপি এবং রাষ্ট্রপতি, শিক্ষামন্ত্রী ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে এবং রিসিভ কপিও সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ১২ এপ্রিলের প্রেস কনফারেন্স থেকে শুরু করে স্মারকলিপি ও খোলা চিঠি প্রদানের বিভিন্ন সংবাদ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে পর্যায়ক্রমে উঠে এসেছে। এরই অংশ হিসেবে এই মানববন্ধনের আয়োজন।
করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের প্রায় ২ বছর সময় জীবন থেকে অতিবাহিত হতে চলেছে। তাই করোনাকালে সরকারের সব প্রণোদনার পাশাপাশি মুজিব বর্ষের ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছরে বেকার যুবকেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ‘প্রণোদনাস্বরূপ’ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবি জানান। এ প্রজন্মের বয়সজনিত ক্ষতিগ্রস্ততা বিবেচনা করে সরকারি চাকরিতে আবেদন তথা প্রবেশাধিকারের বয়সসীমা ৩২ বছরে উন্নীত করা এ মুহূর্তে অতীব প্রয়োজন বলেও মনে করছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও অভিভাবক হিসেবে শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি ও আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। সুত্রঃ প্রথম আলো