৮ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত আট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমন্বিত বাছাই পরীক্ষার মাধ্যমে অফিসার (২০১৯ সালভিত্তিক) পদে ২৪৭৮ জনকে নিয়োগ দেবে। আবেদন প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শেষ হয়েছে, এবার প্রস্তুতির পালা। নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রস্তুতিমূলক পরামর্শ দিয়েছেন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের অফিসার জুলিয়া খাতুন ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের অফিসার (ক্যাশ) শাহরিয়ার আলম রানা, লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

১৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০

Combined 8 Bank Job Exam preparation and suggestion 2021
Combined 8 Bank Job Exam preparation and suggestion 2021

যেভাবে পরীক্ষা

বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাধীন সমন্বিত আট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অফিসার (জেনারেল) পদের পরীক্ষা হবে তিন ধাপে। প্রথম ধাপে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় ১০০ নম্বরের এমসিকিউ (বহু নির্বাচনী প্রশ্ন) পদ্ধতিতে। দ্বিতীয় ধাপে ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা।

লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা) হবে ২৫ নম্বরের ওপর। প্রিলিমিনারি বা বাছাই পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, কম্পিউটারের ওপর মোট ১০০ নম্বরের প্রশ্ন হয়। এ  ক্ষেত্রে গণিতে ৩০ নম্বর, ইংরেজিতে ২৫ নম্বর, বাংলায় ২০ নম্বর, সাধারণ জ্ঞানে ১৫ এবং কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তিতে ১০ নম্বর।

গণিত ও ইংরেজি বেশি গুরুত্বপূর্ণ চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে সব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে।

১। প্রস্তুতির ছক রুটিনমাফিক

শুরু থেকেই দৈনিক পড়াশোনার জন্য নিজের সুবিধামতো একটি ছক বা পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী পড়ার জন্য কমপক্ষে ৮-১০ ঘণ্টা বরাদ্দ রাখতে পারেন। গণিত ও ইংলিশের জন্য বেশি সময় বরাদ্দ রেখে রুটিন সেট করুন। রুটিনমাফিক পড়াশোনা করলে নিয়মিত গোছানো পড়া হয়। সময়মতো প্রস্তুতি সম্পন্ন করা যায়।

২। বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান

শুরুতেই বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের বিগত ৮-১০ বছরের প্রশ্ন সমাধান করুন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করে রাখুন, যাতে পরীক্ষার আগে চোখ বুলিয়ে যেতে পারেন। চাকরির পরীক্ষায় বিগত সালের অনেক প্রশ্ন হুবহু আসে।

আবার হুবহু না এলেও একই নিয়মে আসতে পারে।

ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা হয় ফ্যাকাল্টিভিত্তিক। তাই প্রস্তুতির জন্য ফ্যাকাল্টিভিত্তিক বিগত সালের প্রশ্ন (সমাধানসহ) দেওয়া আছে, এমন বই বাজার থেকে বেছে নিতে হবে।

আইবিএ, বুয়েট ইত্যাদি ফ্যাকাল্টির বিগত প্রশ্নপত্র দেখলে কোন ফ্যাকাল্টির প্রশ্নের ধরন কেমন হয়, কোন কোন টপিকস থেকে প্রশ্ন বেশি আসে কোন ফ্যাকাল্টির পরীক্ষায়—এগুলো খাতায় নোট করে রাখতে পারেন। এভাবে আলাদা করে পড়তে পারলে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে জানা যাবে। আর যখন জানা যাবে যে পরীক্ষার দায়িত্ব কোন ফ্যাকাল্টি নিয়েছে তাহলে সে আলোকে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া যাবে।

৩। প্রস্তুতির সহায়ক ওয়েবসাইট

বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ চাকরি পরীক্ষায় বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে প্রশ্ন তুলে দেওয়া হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য কিছু ওয়েবসাইট হলো—sawaal.com, indiabix.com, examveda.com, majortests.com, gmatclub.com, gyanjosh.com, competoid.com,

প্রায়ই গণিত, ইংরেজি ও কম্পিউটার বিষয়ের প্রশ্ন এ ধরনের সাইট থেকে আসে।

৪। অঙ্কের সমাধান দ্রুত হোক

অন্য প্রার্থীদের থেকে এগিয়ে থাকতে হলে দ্রুত অঙ্কের সমাধান করা এবং উত্তর বের করা শিখতে হবে। পরীক্ষার হলে ৬০ মিনিটের মধ্যে ৮০-১০০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। এর মধ্যে গণিতের ওপর ২০-২৪টি প্রশ্ন থাকে। বিস্তারিত অঙ্ক করে উত্তর বের করতে গেলে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই দ্রুত অঙ্কের উত্তর বের করার শর্ট টেকনিক শিখে নিতে পারেন।

 

অঙ্কের উত্তর করার জন্য অনুশীলনের বিকল্প কিছু নেই। তবে যাঁদের গণিতের বেসিক দুর্বল, তাঁদের শর্ট টেকনিকের কথা না ভেবে আপাতত বেসিক ঝালাইয়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। এর জন্য ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির গণিত বোর্ড বইগুলো অনুসরণ করুন। এ ছাড়া বাজারে ব্যাংকে চাকরির প্রস্তুতির বিভিন্ন বই পাওয়া যায়। গণিতের বেসিক পাকাপোক্ত হলে শর্ট টেকনিক শেখা যেতে পারে।

৫। ইংরেজিতে জোর দিন

ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার জন্য গণিতের পাশাপাশি ইংরেজিতেও ভালো নম্বর তোলার বিকল্প নেই। প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ইংরেজি বিষয় দিয়ে দিনের পড়া শুরু করতে পারেন। ইংরিজিতে ভালো করতে বেশি বেশি ভোকাবুলারি পড়তে পারেন। ব্যাংকে চাকরি পেতে ভোকাবুলারি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টা করে বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। এভাবে প্রতিদিন আপনি পড়তে থাকলে নতুন নতুন ভোকাবুলারি আপনার ভাণ্ডারে জমা হবে। আর আগে শেখা ভোকাবুলারিগুলোও ঝালাই হয়ে যাবে।

 

পাশাপাশি ইংরেজি গ্রামারে গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যাংকে চাকরির পরীক্ষায় ইংরেজি সাহিত্যের চেয়ে ইংরেজি গ্রামার থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। প্রতিদিন ইংরেজি পত্রিকার এডিটরিয়াল বা সম্পাদকীয় অংশের অনুবাদ করতে পারেন। প্রথম দিকে হয়তো কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারেন। মানসম্মত অনুবাদ না-ও হতে পারে, কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত অনুবাদ করতে থাকেন, তাহলে কয়েক মাসের মধ্যে আপনার অনুবাদে সাবলীলতা ও দক্ষতা চলে আসবে।

আর এই দক্ষতা আপনার পরবর্তী সময় ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষাসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় দারুণ কাজে দেবে। অনুবাদ অনুশীলনের জন্য ‘এডিটরিয়াল নিউজ’ সংবলিত মাসিক ম্যাগাজিন বা এ ধরনের অনলাইন প্রকাশনা পড়তে পারেন। এ ছাড়া ড. মহিউদ্দীনের Translation for competitive exam বইটি থেকে অনুশীলন করতে পারেন। এখানে বিগত বছরের ব্যাংকসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার অনেক অনুবাদ ব্যাখ্যাসহ দেওয়া আছে।

Combined 8 Bank Job Exam preparation and suggestion 2021

৬। বাংলায় হেলাফেলা নয়

ব্যাংকের চাকরির প্রস্তুতিতে বাংলা বিষয়কে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই বাংলা সমান গুরুত্ব বহন করে। প্রিলিমিনারিতে ২০-২৫ নম্বর এবং লিখিত পরীক্ষায় ৬০-৭০ নম্বর থাকে। বর্তমান প্রশ্ন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর বাংলা প্রশ্নের ধরন এবং এটা কঠিন, নাকি সহজ হবে এগুলো নির্ভর করে। প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বাংলা সাহিত্য ও বাংলা ব্যাকরণ উভয়ের ওপর সমান দক্ষতা থাকতে হবে। লিখিত প্রস্তুতিতে উন্মুক্ত ও তথ্যবহুল লেখার অনুশীলন করতে হবে। এ জন্য পত্রিকার সম্পাদকীয় ও সমসাময়িক ঘটনাবলি সংক্রান্ত খবর দেখতে পারেন।

৭। সময় ব্যবস্থাপনা শেখা দরকার

সময়ের সুষম বণ্টন খুব জরুরি।  সঠিক সময় ব্যবস্থাপনার অভাবে অনেকেই ভালো প্রস্তুতির পরও পরীক্ষায় সব উত্তর সময়ের অভাবে করতে পারেন না। প্রস্তুতি মোটামুটি ভালো পর্যায়ে গেলে বাসায় বসেই মডেল বিগত বছরের বা নমুনা প্রশ্ন দেখে নির্ধারিত সময় ধরে টেস্ট দিন। এরপর তা নিজেই মূল্যায়ন করুন। এর ফলে নিজের দুর্বলতা ও সময় ব্যবস্থাপনা নিয়ে মূল্যায়ন করতে পারবেন। অনেক কিছু পড়ার পরও দেখা যায় পরে আর মনে থাকে না। তাই প্রচুর অনুশীলন করুন।

কোথায় কত পদ

সোনালী ব্যাংক লিমিটেড-৭৫৮টি, জনতা ব্যাংক লিমিটেড-১২১টি, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড-৬৯টি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড-৩টি, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক-৫৭টি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক-১৪৪০টি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক-৩টি এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন-২৭টি।


সুত্রঃ কালের কন্ঠ