উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি


বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের অধীন পরীক্ষা

কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (১০ম গ্রেড) পদে ১৩৯৪ জনকে নিয়োগের লক্ষ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। অনলাইনে আবেদন করা যাবে ২৬ জুলাই ২০২০ পর্যন্ত। এ পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সালেহ আহমেদ-এর সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে ৪ বছর মেয়াদি কৃষি ডিপ্লোমাধারী অনধিক ৩০ বছর বয়সী (১ জুন ২০২০ তারিখে) প্রার্থীরা ‘উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা’ পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীদের সর্বপ্রথম ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ) পদ্ধতিতে, সময় ১ ঘণ্টা। ১০০টি প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য ১ নম্বর। আর ভুল উত্তরের জন্য ০.৫০ নম্বর করে কাটা যাবে। পরীক্ষা হবে বাংলা ২০, ইংরেজি ২০, সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) ২০, সংশ্লিষ্ট টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল বিষয়ে ৪০ নম্বর, সর্বমোট ১০০ নম্বর।

প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণদের ২০০ নম্বরের ৪ ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ৫০ নম্বরের ব্যাবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, আবেদনকারী প্রার্থীর সংখ্যা ১০০০-এর কম হলে প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি বা এমসিকিউ পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে না। সরাসরি লিখিত পরীক্ষা দিয়ে তারপর ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হতে হবে।

 

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি

 

প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল বিষয়

যেহেতু এই পরীক্ষার প্রার্থীরা সবাই কৃষি ডিপ্লোমাধারী আর কর্মক্ষেত্রও কৃষি সম্পর্কিত, তাই পরীক্ষার এ অংশে প্রশ্ন মূলত ডিপ্লোমা কৃষির বইগুলো থেকে আসবে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো—

১. কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, ২. সেচ, ৩. কৃষি পরিচিতি, ৪. মাঠ ফসল, ৫. উদ্ভিদ পুষ্টি ও সার, ৬. আইপিএম বা সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা, ৭. সবজি চাষ, ৮. ফল চাষ, ৯. মৃত্তিকা, ১০. নার্সারি, ১১. ফসলের রোগ, ১২. পোকা-মাকড় ও দমন, ১৩. ফুল ও সুদৃশ্য গাছের চাষাবাদ, ১৪. আগাছা ও তা দমন, ১৫. মসলা চাষ, ১৬. চিংড়ি চাষ, ১৭. গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি লালন-পালন ও মাছের চাষ, ১৮. বীজ প্রযুক্তি প্রভৃতি।

পাশাপাশি বিগত সালের কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন চাকরির প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো দেখা যেতে পারে। তা ছাড়া বাজারের প্রচলিত ভালো মানের একটি কৃষি নিয়োগ গাইড সংগ্রহ করে পড়া যেতে পারে।

 

বেশি নম্বর পেতে বাংলা

পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেতে বাংলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিকল্পিত পড়াশোনা করলে বাংলায় ভালো নম্বর পাওয়া যায়। বাংলায় সাধারণত দুই ধরনের প্রশ্ন আসে—সাহিত্য ও ব্যাকরণ। সাহিত্য অংশে প্রস্তুতির জন্য নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র বইয়ের বিভিন্ন গল্প, কবিতা ও রচয়িতাদের সম্পর্কে পড়া যেতে পারে। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে বেশি প্রশ্ন আসে। এ ছাড়া অন্য কবি-সাহিত্যিকদের জন্ম, মৃত্যু, সাল, তাঁদের রচিত গুরুত্বপূর্ণ কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস, নাটক প্রভৃতি। এ ছাড়া বিখ্যাত উপন্যাস, ছোটগল্পের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ও ডায়ালগ সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। ব্যাকরণ অংশের প্রস্তুতির জন্য নবম ও দশম শ্রেণির বোর্ড ব্যাকরণ বইটি খুব ভালোভাবে পড়তে হবে। না বুঝে মুখস্থ করা যাবে না। ব্যাকরণ অংশ থেকে পরিভাষা, এককথায় প্রকাশ, বাগধারা, ণত্ববিধান ও ষত্ববিধান, সমাস, সন্ধি, কারক ও বিভক্তি, শব্দ, যুক্তবর্ণ বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে পড়তে হবে।

 

চাকরি পেতে ইংরেজি

বর্তমান সময়ে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ইংরেজিতে দক্ষ হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। তাই প্রস্তুতির শুরু থেকেই ইংরেজি বিষয়টাকে গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। ইংরেজির চর্চা প্রতিদিনই রাখতে হবে। কেননা প্রফেশনাল বিষয়ে অনেকে ভালো করলেও ইংরেজিতে খুব একটা নম্বর তুলতে পারেন না। ইংরেজিতে ৩ ধরনের প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা রয়েছে—ইংরেজি গ্রামার, ভোকাবুলারি টাইপ, ইংলিশ লিটারেচার। তবে গ্রামার আর ভোকাবুলারি অংশ থেকে বেশির ভাগ প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা।

 

গুরুত্বপূর্ণ টপিকস

Sentence, Narration, Voice Change, Correct Form of Verbs, Suffix-Prefix, Translation, Pronunciation, Synonyms and Antonyms, Translations, Group verb, One word substitutions, Transformation of Sentence, Appropriate Word, Appropriate Preposition, Idioms and Phrases প্রভৃতি।

এ ছাড়া বেসিক মজবুত করার জন্য গ্রামারের অন্য বিষয়গুলোও দেখতে হবে।

এ বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য পিসি দাসের লেখা Applied English Grammar and Compositions বইটা বেশ কাজে দেবে।

এ ছাড়া বিগত সালে আগত বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নগুলো বুঝে বুঝে সমাধান করতে পারলে কাজে ফলপ্রসূ হবে।

 

সাধারণ জ্ঞান অসাধারণ কিছু নয়

প্রস্তুতির জন্য চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা পড়তে হবে। বিগত সালে আসা বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করতে পারলে বেশ কাজে দেবে।

বিগত বছরের প্রশ্নগুলো পড়তে গিয়ে লক্ষ করলে দেখা যাবে যে ওই সময়ে বিষয়টা সাম্প্রতিক সময়ে ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার আবেদন হারিয়েছে। সেসব প্রশ্ন বাদ দিয়ে পড়তে হবে। সাধারণ জ্ঞানের যে বিষয়গুলো কঠিন মনে হয়, সেগুলো ছন্দ বা সূত্র বানিয়ে মনে রাখা যেতে পারে। সাধারণ জ্ঞানের বিভিন্ন ঐতিহাসিক তারিখ-সাল মনে রাখতে যাদের কষ্ট হয়, তাদের জন্য পরামর্শ হলো, গুরুত্বপূর্ণ অল্প কয়েকটা তারিখ-সাল ছাড়া অনান্য তারিখ মনে রাখার দরকার নেই। কেননা বর্তমানে চাকরির পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তারিখ-সাল থেকে মাত্র ২-৩টা প্রশ্ন এসে থাকে। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, কৃষিক্ষেত্রে অর্জন, জাতিসংঘ প্রভৃতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে।

 

 লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস ও নম্বরবণ্টন

লিখিত পরীক্ষার ২০০ নম্বরের মধ্যে বাংলা ৪০, ইংরেজি ৪০, সাধারণ জ্ঞান ৪০ এবং প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল/প্রফেশনাল বিষয়ে ৮০ নম্বরের ওপর পরীক্ষা হবে।

– বাংলা : (ক) রচনা ১৫ (খ) সারাংশ/সারমর্ম ৫ (গ) পত্র লিখন [ব্যক্তিগত পত্র, পত্রিকায় প্রকাশার্থে পত্র, ব্যবসাসংক্রান্ত পত্র, স্মারকলিপি] ৫। (ঘ) বঙ্গানুবাদ ৫ (ঙ) ব্যাকরণ [ভাষার সংজ্ঞা, ভাষার রূপ, সাধু ভাষা ও চলিত রীতির রূপান্তর, দেশি ও বিদেশি শব্দ, ণত্ববিধান ও ষত্ববিধানের সংজ্ঞা ও নিয়মাবলি, দ্বিরুক্ত শব্দ, পদ, ধাতু, উপসর্গ, অনুসর্গ, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, বিরাম চিহ্ন, শুদ্ধ ও অশুদ্ধ, বাগধারা, বাক্য সংকোচন, প্রতিশব্দ ও সমার্থক শব্দ, প্রায় সমোচ্চারিত শব্দ, একই শব্দের বিভিন্নার্থে প্রয়োগ] ১০।

– ইংরেজি : (a) Essay (with hints) 15, (b) Letter : official/demi official/memorandum / Bussiness type 5, (c) Comprehension 10, (d) Grammar : Use of verb, preposition, Voice, Naration, Correction of errors in composition, Use of words having similar pronunciation but conveying different meaning, use of Idioms and Phrases 10.

 

সাধারণ জ্ঞান :

বাংলাদেশ বিষয়াবলি (১৫) : বাংলাদেশের সংবিধান, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস, শিল্প ও সাহিত্য, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ, জলবায়ু, পরিবেশ, বাংলাদেশের উন্নয়নে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্যের অবদান, উন্নয়ন পরিকল্পনা।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি (১৫) : বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো, গ্লোবালাইজেশন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো, বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা স্থানগুলো।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (১০) : দৈনন্দিন বিজ্ঞান, বায়ু, মাটি, তাপ, বিদ্যুৎ, আলো, চুম্বক, খাদ্যের উপাদান, জনস্বাস্থ্য, দূষণ ও কম্পিউটার।


সুত্রঃ কালের কন্ঠ