সরকার ছুটি ঘোষণা করেছে, খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া নিষেধ। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা শুধু কাগজে-কলমেই। কোথাও সামাজিক বা শারীরিক দূরত্বের বালাই নেই। সবাই ফ্রি স্টাইলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঢাকাসহ সারাদেশে পাবলিক পরিবহন শুধু চলছে না। এর বাইরে আর সব ধরনের কার্যক্রম চলছে। প্রাইভেট গাড়ি, রিকশা, সিএনজি অবাধে চলছে। এখন ঢাকামুখী এবং ঢাকা থেকে বাইরে যাওয়ার স্রোত চলছে। ফেরিঘাটগুলোতে গাড়ির লম্বা সারি পড়ে গেছে। এতদিন যারা ঢাকায় আটকেছিলেন তারা ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন আর যারা এতদিন বাড়ি ছিলেন তারা ফিরছেন ঢাকায়। ফলে চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ।
রাস্তাঘাট, দোকানপাট কোথাও সরকারি বিধিবিধান মানা হচ্ছে না। সরকার লকডাউন সামান্য শিথিল করেছে অর্থনীতি সচল রাখতে। আর এ সুযোগে সবাই বের হয়ে পড়েছেন রাস্তায়। অনেক বেসরকারি অফিস এরই মধ্যে খুলে দিয়েছে। কর্মীদের যানবাহন সুবিধা নিশ্চিত না করেই অফিসে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে বিধিবিধান না মেনেই তাদের যেতে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিত্সক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ইত্তেফাককে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এখনো প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিপুলসংখ্যক চিকিত্সক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন যদি আমরা কোনো ধরনের শিথিলতা দেখাই, তাহলে এই দুর্যোগ থেকে সহসাই মুক্তি পাব না। ফলে আমাদের সবাইকে এখন বেশি করে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না।
রাজধানী ঢাকার অলিগলিতে অনেকেই মুখে মাস্ক পরছেন না। এক জন অন্য জনের গা ঘেঁষে চলাফেরা করছেন। পাড়ার অলিগলিতে এখনো চলছে আড্ডা। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে মুদি দোকান সবখানেই ভিড়। গত এক সপ্তাহে পুলিশ কিছু মার্কেট বন্ধ করলেও অধিকাংশ মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
কোন দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ? জানতে চাইলে রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, আমি বুঝতে পারছি না, আমরা কি ব্রাজিল বা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থার দিকে যাচ্ছি? এখন এই শৈথিল্য ভয়াবহ পরিণতির দিকে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে না তো? আমরা বারবার বলছি, এখন শৈথিল্য দেখানো যাবে না। কিন্তু রাস্তাঘাটে যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে আমরা উত্সব করছি। কিছু মানুষ তো প্রয়োজনে বের হচ্ছেন। কিন্তু অপ্রয়োজনে বের হওয়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এদের নিবৃত্ত করতে হবে। এই মাস আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও বুঝতে হবে।
বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে না এলেও আশপাশের অনেক দেশ এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। অথচ স্বাস্থ্য সূচকে তারা আমাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ইত্তেফাককে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানলে আমাদের এখানেও নিয়ন্ত্রণে থাকত। কিন্তু আমরা তো স্বাস্থ্যবিধি মানছি না। সরকার অর্থনীতির কথা চিন্তা করে একটু শিথিল করেছিল। আর এই সুযোগে আমরা পুরো সিস্টেমটা ভেঙে ফেলেছি। এর পরিণতি আসলে কী হবে চিন্তা করাও কঠিন।
থাইল্যান্ডে কোনো লকডাউনই ঘোষণা করা হয়নি। শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। সেখানে ৫৫ জন মারা গেছে। এর পরই সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে কড়াকড়ি আরোপ করে। সেখানে সবাই এটা মানছেন। ফলে এখন তারা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। প্রতিটি দোকানে স্যানিটাইজার রাখা হয়েছে। শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানও স্বাস্থ্য সূচকে আমাদের থেকে অনেক নিচে। শুধু নিয়মনীতি মেনে চলার কারণে তারা কত ভালো অবস্থায় আছে। ভিয়েতনামেও একই অবস্থা। তাইওয়ান ও হংকংও নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ভারতের কেরালা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। সূত্রঃ ইত্তেফাক