ট্রাস্টের আওতায় কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডারদের (সিএইচসিপি) চাকরি স্থায়ীকরণের বিধান রেখে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১৮’-এর খসড়া করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খসড়াটি অনুমোদনের জন্য আজ সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে তোলা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ তাঁর তেজগাঁও কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। একজন সিনিয়র মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে এক মাস তিন দিন রাজপথে থেকে চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস নিয়ে ঘরে ফিরেছিলেন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডাররা (সিএইচসিপি)। ২৫ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করেন। এর পাঁচ মাসের মাথায় চাকরি স্থায়ী করার আইনের খসড়া হয়েছে। তবে তাঁদের চাকরি স্থায়ী হলেও তা রাজস্ব খাতের হবে না। এসব স্বাস্থ্যকর্মীর চাকরি স্থায়ী হবে ট্রাস্টের আওতায়। তাঁরা আন্দোলন করেছিলেন রাজস্ব খাতে স্থায়ী হওয়ার জন্য। রাজস্ব খাতে না হলেও ট্রাস্টের আওতায় থেকে তাঁরা রাজস্ব খাতের প্রায় সব সুবিধা ভোগ করবেন বলে জানা গেছে।
খসড়া আইনে বলা হয়, নতুন করে যাঁরা সিএইচসিপি পদে চাকরিতে যোগদান করবেন তাঁদের চাকরিও স্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। আগে যাঁরা চাকরিতে প্রবেশ করেছেন তাঁরা জ্যেষ্ঠতা পাবেন।
এই ট্রাস্ট সরকারি অনুদান, দেশি-বিদেশি সংস্থা ও ব্যক্তির অনুদান, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা, প্রবাসীদের সহায়তা, সরকার অনুমোদিত বিদেশি উন্নয়ন সংস্থার অনুদান, সমাজের বিত্তবান, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, বিভিন্ন সংগঠন, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং লটারির মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থে পরিচালিত হবে। ট্রাস্টের তহবিলে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ না থাকলে সরকার প্রতিবছর রাজস্ব অথবা উন্নয়ন বাজেট থেকে ঘটতি তহবিল প্রদান করবে।
আইনটি প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার স্বাস্থ্যসেবা গ্রামীণ জনপদের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চায়। কমপক্ষে সাধারণ চিকিৎসা, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, আমাশয়, সাধারণ জ্বরসহ ছোটখাটো চিকিৎসা যেন সাধারণ মানুষ বিনা মূল্যে ওষুধসহ পায় সে ব্যবস্থা করাই এর উদ্দেশ্য। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৩ হাজার ৮৬১টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। আরো এক হাজার ২৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মসূচির আওতায় আসছে। ২০০৯ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৭ সালের ডিসিম্বর পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারীর সংখ্য ৬২ কোটি ৫৭ লাখ।
২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কমিউনিটি ক্লিনিক-সংক্রান্ত ন্যাশনাল কমিটির সভায় স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট চালুর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু নানা কারণে ট্রাস্ট গঠন আর হয়নি। পরে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন প্রণয়নের জন্য ২১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত চাওয়া হয়। এর মধ্যে ১৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে মতামত পাওয়া যায়। সবার মতামতের ভিত্তিতে আইনের খসড়াটি প্রস্তুত করে তা অনুমোদনের জন্য প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে উত্থাপন করা হয়। সচিব কমিটির অনুমোদনের পর আজ তা নীতিগত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করা যাবে। খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, ট্রাস্টের তহবিল ব্যবহার করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে ইউনিয়ন, উপস্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা পর্যায়ের সদর হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি কার্যকর সেতুবন্ধ রেফারেল পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা হবে। অর্থাৎ ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো ধরনের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না হলে ওই রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না হলে জেলা সদর হাসপাতালে, জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না হলে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হবে। এই ট্রাস্টের অধীন এবং ট্রাস্টে ন্যস্ত সব মানবসম্পদকে চাকরিকালীন সব কল্যাণ ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং অবসর সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। একটি ট্রাস্ট হবে, যার মূল কার্যালয় থাকবে ঢাকায়। তবে সরকার প্রয়োজনে দেশের অন্য কোনো স্থানে এর শাখা কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে। ট্রাস্টের একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত ব্যক্তির সভাপতিত্বে ট্রাস্ট গঠন হবে।
ট্রাস্টের একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে। প্রধানমন্ত্রী পরিষদের সভাপতি হবেন। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী সহসভাপতি, অর্থমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী সদস্য, পরিকল্পনামন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী সদস্য, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত একজন খ্যাতিমান ব্যক্তি উপদেষ্টা কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন। উপদেষ্টা পরিষদ বছরে এক বা একাধিক সভা করতে পারবে। ট্রাস্টের অধীনে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়নে একজন স্বনামখ্যাত ব্যক্তি ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি হবেন। একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব, অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস কম্পানির এমডি, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, ঔষধশিল্প সমিতির সভাপতি এবং তিনজন চিকিৎসক বোর্ডে সদস্য হিসেবে কাজ করবেন। ট্রাস্টের প্রধান কার্যালয়, জেলা অফিস, অন্য সব অফিস ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। সূত্রঃ কালের কন্ঠ