প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে দেশে এক প্রকার খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।   দেশের সকল চাকরির পরীক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কেই এই বিষয়ের জন্য দায়ী করছে।প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ভাবেই নি আমাদের দেশে দূর্নীতি এখন কোন পর্যায়ে আছে।   তবে প্রাথমিক শিক্ষা  অধিদপ্তরের সবচেয়ে বড় ভুল প্রশ্ন ফাঁস কিভাবে হচ্ছে এ বিষয়ে চিন্তা না করে, শুধু চাকরির পরীক্ষার্থীদের উপর চাপ বৃদ্ধি করছে।  প্রশ্ন ফাঁস চাকরির পরীক্ষার্থীরা করছে না, প্রশ্ন ফাঁস করছে প্রশাসন ও নেতারা । একজন সাধারণ পরীক্ষার্থীর হাতে প্রশ্ন চলে আসা এতো সহজ বিষয় না। আপনারা চাকরির পরীক্ষার্থীদের উপরে চাপ না দেখিয়ে প্রশ্ন ফাঁস কে করে চাকরির পরীক্ষার্থীদের দিচ্ছে সে দিকে দেখা উচিৎ ছিল  । এই বিষয়ে কিছু বলার আগে আমরা মূল প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে কিছু আলোচনা করতে চাই।  

 

কেন প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে??

প্রশ্ন ফাঁসের মূল কারণ আমরা নিজেরাই।  দেশের ৮০% চাকরির পরীক্ষার্থীর পড়ার চিন্তা নাই,  শুধু দুর্নীতি করে কিভাবে চাকরি পাবে এই চিন্তা মাথায় নিয়ে চলে।  বিশ্বাস না হলে  ফেসবুকে কোন একটা গ্রুপে পোস্ট দিয়ে দেখেন , যে আমি ২১ তারিখের পরীক্ষার প্রশ্ন দেবো!  ১০০জন কমেন্ট করলে দেখবেন ৯৯% বলবে ভাই আমারে দেন। প্রশ্ন না পেয়ে আবার তারাই বলবে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে এবং পরীক্ষা বাতিল করেন ।আগে আমাদের নিজেদের ঠিক হতে হবে , তার পরে অন্যদের ঠিক করতে হবে।  আমাদের নিজেদের এই মনুষ্যত্ব  নাই অন্যের মনুষ্যত্ব নিয়ে কথা বলে বেড়ায় ।  


প্রশ্ন ফাঁসের মূল কারণঃ


১। দেশের প্রশাসন দুর্নীতিপরায়ণ।  দেশের এমন কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান নাই যেখানে দুর্নীতি হয় না।  আমরা সেদিকে চোখ না দিয়ে শুধু পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে চিল্লাচিল্লি করি।

২।  স্থানীয় সরকার ,প্রশাসন ও দলীয়  নেতা  তারা সবাই এক হয়ে গিয়েছে।  একজন নেতা একজন স্থানীয় সরকার বা প্রশাসন প্রধানকে যা বলবে তারা তাই করছে।এইটা শুধু প্রশ্ন ফাঁস না ,দেশের ৮০%  সমস্যার কারণ।

৩। প্রতিটা জেলার নেতারা চাকরি দেওয়ার নামে  লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে নিয়েছে।( এইটা সবাই জানে কিন্তু  কারো বলার সাহস নাই) । যারা টাকা নিয়েছে তারা তো প্রশ্ন ফাঁস বা যে কোন উপায়ে পারবে চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করবে।

৪।প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বে আছে বড় বড় রাজনৈতিক নেতা । যাদেরকে প্রশাসন বা কোন শিক্ষক কিছু বলতে পারবে না।  তাদেরকে দুর্নীতি করতে দিতে তারা বাধ্য হচ্ছে।

৫।  জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা।  প্রশ্ন ফাঁসের মূল কারণ জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা । যদি জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা না হতো তাহলে প্রশ্ন ফাঁস কম হতো। কারণ  স্থানীয় সরকার ,প্রশাসন ও দলীয়  নেতা  তারা সবাই এক হয়ে গিয়েছে।ফলে জেলায় প্রশ্ন ফাঁস সহজ হচ্ছে।

৬।  জেলা পর্যায়ে প্রশ্ন তৈরি। জেলা পর্যায়ে প্রশ্ন তৈরি এবারের সর্বোচ্চ ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।  ফলে যেখানে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে,  সেখান থেকেই প্রশ্ন ফাঁস হয়ে চলে যাচ্ছে।    


বিঃদ্রঃ অনেকেই এখানে রাজনীতি খুজতে আসবে ,তাদের বলতে চাই।দেশের এইটা একটা বড় সমস্যা যা রাজনীতির জন্য সৃষ্টি হয়েছে। আগে আপনারা ভালভাবে রাজনীতি করেন তার পরে রাজনীতি খোঁজেন ।


প্রশ্ন ফাঁস সমস্যার  সমাধানঃ

১। এমসিকিউ পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা নিতে হবে।  শুধু এমসিকিউ পরীক্ষা হওয়ার কারণে সবাই এটাতে দুর্নীতির দিকে বেশি ঝুঁকে যাচ্ছে।

২। এক জেলার পরীক্ষা অন্য জেলায় নিতে হবে।  নিজ জেলায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হচ্ছে।

৩। এক জেলার প্রশাসনিক দায়িত্বে অন্য জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিতে হবে। (প্রশাসিক সমস্যা থাকবে না)

৪। প্রশ্ন তৈরি থেকে শুরু করে পরীক্ষার কেন্দ্র পর্যন্ত সিসি ক্যামরার মাধ্যমে নিয়ে আসতে হবে।

৫। যারা প্রশ্ন ছাপাবে তারা এবং যারা প্রশ্ন তৈরির রুমে  যাবে তারা পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না,  এমনকি তারা বাহিরে যেতে পারবে না।  

৬। এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নের মত প্রতিটা প্রশ্ন প্যাকেজিংয়ে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার করতে হবে।

৭। এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার মত প্রতিটা শিক্ষক থেকে শুরু করে যে কোন কর্মচারি পরীক্ষার কেন্দ্রে যাওয়ার পরে সে যেন বের হতে না পারে।

এইটা মেনে চলতে পারলে প্রশ্ন ফাঁসের সমাধান ৯৯% কমে যাবে। আমার দৃষ্টিতে প্রশ্ন ফাঁস হবে না।


কোন ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার ছোট মাথায় এতো আইডিয়া থাকলে ,  দেশের বড় বড় ব্যাক্তির মাথায় কত আইডিয়া আছে ।এই গুলো কাজে না লাগিয়ে আমরা কেন প্রশ্ন ফাঁসের দেশ হয়ে যাচ্ছি???


অনেকে আমাদের ফোন করে জানতে চেয়েছে পরীক্ষা কি বাতিল হবে?? 

উত্তরঃ অনেক কঠিন।  আর এতো পরীক্ষার্থীদের  আবার পরীক্ষা নেওয়া আরো বেশি কঠিন । তবে শিক্ষা অধিদপ্তর চাপে পরলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত পদক্ষেপ নিতে পারে । যারা পাশ করেছে তাদের শুধু আবার পরীক্ষা হবে।তবে এখন পর্যন্ত দেখে মনে হচ্ছে না আবার পরীক্ষা হবে।