সকল সরকারি চাকরির তথ্য সবার আগে মোবাইলে নোটিফিকেশন পেতে ডাউনলোড করুন
Android App: Jobs Exam Alert

সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার নতুন মানবণ্টন ও পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক বিভ্রান্তি ও দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। ৯০ নম্বরের পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে "লিখিত পরীক্ষা" শব্দটি উল্লেখ থাকায় অনেকেই ধরে নিচ্ছেন, পরীক্ষাটি হয়তো গতানুগতিক MCQ পদ্ধতির বদলে বর্ণনামূলক বা রচনামূলক হতে পারে। এই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

তাহলে কি সত্যিই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বর্ণনামূলক বা লিখিত আকারে হবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের কিছু বাস্তবসম্মত দিক বিশ্লেষণ করতে হবে। চলুন, কয়েকটি যুক্তির মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক।

১. ‘লিখিত পরীক্ষা’ নামের রহস্য ও অতীত ঐতিহ্য

বাংলাদেশে সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায়, বিশেষ করে প্রথম ধাপের বাছাই পরীক্ষাকে আনুষ্ঠানিকভাবে "লিখিত পরীক্ষা" বলা হয়। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রেও এই ঐতিহ্য চলে আসছে। গত বছরগুলোতেও পরীক্ষাকে "লিখিত পরীক্ষা" হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে MCQ (Multiple Choice Question) বা বহুনির্বাচনী প্রশ্ন পদ্ধতিতে। OMR শিটে বৃত্ত ভরাট করার মাধ্যমে এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। সুতরাং, বিজ্ঞপ্তিতে "লিখিত পরীক্ষা" শব্দটি দেখেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি একটি আনুষ্ঠানিক পরিভাষা মাত্র।

২. বিশাল সংখ্যক পরীক্ষার্থী ও ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদনকারীর সংখ্যা সবসময়ই বিপুল। এই সংখ্যা প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ বা তারও বেশি হয়ে থাকে। এখন চিন্তা করুন, যদি ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর জন্য বর্ণনামূলক পরীক্ষার আয়োজন করা হয়, তাহলে কী ঘটবে?

  • খাতা মূল্যায়ন: ১৫ লাখ বর্ণনামূলক খাতা মূল্যায়ন করা একটি প্রায় অসম্ভব কাজ। এর জন্য হাজার হাজার পরীক্ষকের প্রয়োজন হবে। এই বিশাল সংখ্যক খাতা সঠিকভাবে ও নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করতে কয়েক মাস, এমনকি বছরও লেগে যেতে পারে।
  • সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া: বর্ণনামূলক খাতা দেখতে অনেক সময় লাগে। এতে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হবে, যা সরকারের দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
  • নিরপেক্ষতা: ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষক খাতা দেখলে নম্বরের ক্ষেত্রে ভিন্নতা আসতে পারে, যা নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।

বিপরীতে, MCQ পদ্ধতির পরীক্ষা OMR মেশিনের মাধ্যমে খুব দ্রুত ও শতভাগ নির্ভুলভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই লাখ লাখ খাতা দেখে ফলাফল প্রস্তুত করা যায়।

৩. অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও পরীক্ষার ফি

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার আবেদন ফি সাধারণত খুবই কম রাখা হয়, যা ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে থাকে। এই স্বল্প পরিমাণ ফি দিয়ে পরীক্ষার সার্বিক আয়োজন, যেমন—প্রশ্নপত্র তৈরি, কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা এবং পরিদর্শকদের সম্মানী প্রদান করাই কঠিন।

যদি বর্ণনামূলক পরীক্ষা নেওয়া হয়, তবে প্রতিটি খাতা মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষকদের আলাদাভাবে পারিশ্রমিক দিতে হবে। ১৫ লাখ খাতা মূল্যায়নের জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা এই স্বল্প আবেদন ফি থেকে সংকুলান করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক এই সীমাবদ্ধতার কারণেও বর্ণনামূলক পরীক্ষা আয়োজন অবাস্তব।

৪. নতুন পরিকল্পনা ও বর্তমান কাঠামো

সরকারের নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী পরীক্ষা ৯০ নম্বরের হতে পারে এবং এরপর ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই কাঠামোটি মূলত প্রচলিত পদ্ধতিরই একটি আধুনিক সংস্করণ। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, MCQ পরীক্ষার মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক আবেদনকারীর মধ্য থেকে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক যোগ্য প্রার্থীকে ভাইভার জন্য বাছাই করা। এরপর মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে योग्यদের নির্বাচন করা হয়। এই দুই ধাপের প্রক্রিয়াটিই সবচেয়ে কার্যকর ও বাস্তবসম্মত।

শেষ কথা

উপরোক্ত সকল যুক্তি বিশ্লেষণ করে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার "লিখিত পরীক্ষা" আসলে MCQ পদ্ধতিতেই অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, ব্যবস্থাপনার জটিলতা, সময় এবং অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা—এই সবকিছুই বর্ণনামূলক পরীক্ষার বিপক্ষে যায়।

সুতরাং, পরীক্ষার্থীদের উচিত এই ধরনের ভিত্তিহীন দুশ্চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে পুরোপুরিভাবে MCQ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। নতুন মানবণ্টন অনুযায়ী প্রতিটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলেই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। বিভ্রান্ত না হয়ে নিজের পড়ালেখায় মনোযোগ দেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।