অবশেষে শূন্যপদে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি চালু হতে যাচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের শূন্যপদের বিপরীতে বদলির ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই সপ্তাহের মধ্যেই এসংক্রান্ত পরিপত্র জারি হতে পারে। শুধু বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা তাঁদের চাকরিজীবনে একবারই এই বদলি হতে পারবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক অধিশাখা) জহিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের শূন্যপদে বদলিসংক্রান্ত ফাইলের ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে মন্ত্রণালয়। যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে এ সপ্তাহের মধ্যেই পরিপত্র জারি হতে পারে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পরিপত্র জারি হলেও সারা বছরই শিক্ষকরা বদলি হতে পারবেন না। এসংক্রান্ত একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করার পর বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় কিছু মানদণ্ডের ভিত্তিতে অনলাইনে বদলির আবেদন নেওয়া হবে।

এরপর একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলিযোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচন করা হবে।

সূত্র জানায়, ২০১৬ সাল থেকে এনটিআরসিএ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সুপারিশ করে আসছে। প্রথম গণবিজ্ঞপ্তিতে উপজেলাভিত্তিক শিক্ষক সুপারিশ করার ফলে নিজ উপজেলায় শূন্যপদ না থাকায় অনেক শিক্ষক বাধ্য হয়ে মাদরাসায় ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে মেরিট পজিশন অনুযায়ী জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষক সুপারিশ করা হয়েছিল।

এনটিআরসিএর নিয়োগ পরিপত্র অনুযায়ী, একজন ইনডেক্সধারী শিক্ষক যেকোনো বয়সে পরবর্তী যেকোনো গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের মাধ্যমে মেরিট পজিশন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে পারবেন। তাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে অনেক নিবন্ধনধারী শিক্ষক নিজ এলাকায় শূন্যপদ না থাকায় দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আবেদন করে সুপারিশ পেয়েছেন। তবে পরবর্তী সময়ে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ নিয়োগ পরিপত্র ২০১৫-এর ৭ নম্বর অনুচ্ছেদ সাময়িক স্থগিত করার কারণে চতুর্থ ও পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে ইনডেক্সধারীদের বদলি আবেদনের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ইনডেক্সধারী শিক্ষকরা সমস্যায় পড়েছেন।

জানা যায়, এমপিওভুক্ত স্কুলের শিক্ষকদের চাকরি দ্বিতীয় শ্রেণির হলেও তাঁরা সরকার থেকে শুধু মূল বেতন পান।

এর বাইরে তাঁরা শুধু ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা ও এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া পান। ফলে একজন সহকারী শিক্ষক শুরুতে অবসর ও কল্যাণের টাকা বাদ দিয়ে সর্বসাকল্যে বেতন পান প্রায় ১৬ হাজার টাকা। অথচ এনটিআরসিএ শিক্ষকদের দূর-দূরান্তের স্কুলে চাকরির সুপারিশ করছে। চাকরিপ্রার্থীরাও কোনো উপায় না পেয়ে সেখানে যোগদান করছেন।

বদলি নীতিমালার খসড়া থেকে জানা যায়, অনলাইনের মাধ্যমে প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির আবেদন গ্রহণ ও নিষ্পত্তি চলবে, যা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, আঞ্চলিক শিক্ষা কার্যালয় হয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পর্যায়ে নিষ্পত্তি হবে। শুধু এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের চাকরির বয়স দুই বছর পূর্ণ হলেই তিনি নিজ স্থায়ী ঠিকানার এলাকায় বদলির আবেদন করতে পারবেন। একজন শিক্ষক চাকরিজীবনে শুধু একবারই বদলির সুযোগ পাবেন। তবে বদলির ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির সম্মতিপত্র বা অনাপত্তি লাগবে কি না তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, বদলির কারণে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকশূন্যতা সৃষ্টি করা যাবে না। কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক পদের ৫০ শতাংশ শূন্য থাকলে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে কাউকে বদলির আবেদন বিবেচনা করা হবে না। পদ শূন্য না থাকলে বদলির কোনো আবেদনই বিবেচনা করা হবে না। একই পদে একাধিক শিক্ষক বদলির আবেদন করলে এনটিআরসিএর মেধাক্রম ভিত্তিতে আবেদনটি বিবেচনা করা হবে।