৩৭তম বিসিএসের ননক্যাডারে কত পদ? ৩৮তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল কবে? ৩৯তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল দিতে দেরি কেন? ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা কোন মাসে? ৪১তম বিসিএস কি বিশেষ বিসিএস?
গত কিছু দিন ধরে আবারও এসব প্রশ্ন শুনছি। পিএসসি নিয়ে আমি এখন আর প্রতিবেদন করি না। কিন্তু তারপরও ছেলেমেয়েরা উত্তর চাইছেন। কিন্তু উত্তর দেয়ার কর্তৃপক্ষ তো পিএসসি। আমি শুধু আমার মতো করে আপনাদের প্রশ্নের উত্তরগুলো জানার চেষ্টা করে সর্বশেষ যে তথ্য পেয়েছি সেগুলো শেয়ার করছি।
প্রথমেই ৩৭তম এর ননক্যাডার প্রসঙ্গ। আজও আপনারা এসেছিলেন। আপনাদের বার্তা আমি কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছি। আমি যতটা জেনেছি- পিএসসি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম শ্রেণির মোটামুটি যেসব চাহিদা পেয়েছে, তার ভিত্তিতে মার্চ বা এপ্রিলে ফল দিতে শুরু করবে।
তবে দ্বিতীয় শ্রেণির পদে এখুনি সুপারিশ করা হবে না। আপনারা যেমনটি চাইছেন, আরেকটু চাহিদা আসুক। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় চাইলে আরও শূন্যপদের চাহিদা দিতে পারে। পিএসসি যখন যার চাহিদা পাবে, সেটি গ্রহণ করবে।
শিক্ষা দফতরের পদোন্নতি পাওয়া যে ৪০০ পদের কথা বলছেন, তারা চাহিদা দিলে পিএসসি আন্তরিকভাবে গ্রহণ করবে। কিন্তু আমার পর্যবেক্ষণ বলে- শিক্ষা দফতর হয়তো আগ্রহী হবে না। তবে এনবিআরের জন্য পিএসসি অপেক্ষা করবে।
আমি আমার পর্যবেক্ষণ থেকে একটি কথা বলতে পারি- জটিলতা যেন কমে এবং মেধাবীরা যেন নিয়োগ পায় সে কারণেই ননক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা করা হয়েছিল। বিসিএস উত্তীর্ণ ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন দফতরে ননক্যাডারে নিয়োগ দিয়ে দেখা গেছে, তারা সততার সঙ্গে অনেক বেশি সেবা দিচ্ছে। তাদের কাজের মানও খুব ভালো। কিন্তু এখনও অধিকাংশ মন্ত্রণালয় ও দফতর চাহিদা দিতে আগ্রহী না। বারবার বলার পরও তারা চাহিদা পাঠায় না। এ ব্যাপারে পিএসসির আন্তরিকতার ঘাটতি আছে বলে আমি অন্তত মনে করি না। বরং পিএসসি চায় বিসিএস থেকে আরও বেশি নিয়োগ পাক।
আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী যদি মন্ত্রণালয়গুলোকে চাহিদা পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দিতেন। বছরে একটা বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে সব ধরনের নিয়োগের সুপারিশের পক্ষপাতি আমি। তাতে দুর্নীতি কম হয়। মেধাবীরা নিয়োগ পায়। শুভকামনা ৩৭তম ননক্যাডার। আমার ধারণা, ৩৭তমের ননক্যাডারে শেষ পর্যন্ত ভালো কিছুই হবে। শুভকামনা।
এবার ৩৮তম প্রসঙ্গ। আপনারা জানেন ৩৮তম বিসিএস থেকে লিখিত পরীক্ষার খাতা দুজন মূল্যায়ন করছেন। কোনো নিরীক্ষকের অবহেলায় কেউ যেন বৈষম্যের স্বীকার না হন, সে কারণেই এ উদ্যোগ। এই বিসিএসের প্রথম মূল্যায়ন শেষে দ্বিতীয় নিরীক্ষকের কাছে খাতা যাচ্ছে। আগেও বলেছি- এই লিখিত পরীক্ষার ফল পেতে এপ্রিল হয়ে যেতে পারে।
এবার আসি ডাক্তারদের জন্য বিশেষ বিসিএস ৩৯তমের আপডেটে। ডাক্তারদের পদ আরও বাড়ার যে সম্ভাবনা ছিল, সেটি বোধহয় আর থাকছে না। আমার সূত্র বলছে- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যে বাড়তি চাহিদা দেয়ার কথা ছিল, যার কারণে পিএসসি ১৩ হাজার ছেলেমেয়ের ভাইভা নিল, শেষ পর্যন্ত সেটি হচ্ছে না। এই পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল হতে অন্তত এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
৪০তম বিসিএসের কথা বলি। আগেও বলেছি- যেহেতু ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা চলছে, এর পর এইচএসসি পরীক্ষা আছে এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকবে। কাজেই আমার মনে হয় না এপ্রিল মাসের আগে এই পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। সে ক্ষেত্রে মে মাসে কিংবা এর পরে এই পরীক্ষা হতে পারে বলে আমার ধারণা।
৪১তম বিসিএস বিশেষ নাকি সাধারণ হবে, সেই প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর এখন দিতে পারব না। তবে এই বিসিএস শুধুই বিশেষ, এটি যারা বলছেন, তারা কিসের ভিত্তিতে বলছেন- আমি জানি না। পিএসসি চিঠি দিয়েছে। এখন জনপ্রশাসন যেভাবে চাহিদা দেবে, সেভাবেই হবে। কাজেই বিশেষ হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। আমি অবশ্য বিশেষের পক্ষে নই।
আরেকটি কথা। আগেও বলেছি, এখনও বলছি- আপনারা সবাই স্বীকার করবেন যে, এখন বিসিএসের মাধ্যমে কোনো তদবির ছাড়াই সাধারণ ছেলেমেয়েরা চাকরি পাচ্ছে। সরকার এ ব্যাপারে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করছে পিএসসিতে, আমি এমনটি শুনিনি। বরং পিএসসি মোটামুটি স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সরকারের যে কয়টা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আছে, তার মধ্যে পিএসসির ব্যাপারেই এখন সাধারণের সবচেয়ে বেশি আস্থা।
আমার নিজের ভাবনা হলো- আসছে দিনগুলোতে যদি বিসিএস পদ্ধতিতে আরও কিছু সংস্কার হয়, বিশেষ করে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০ করা যায়, সেটি খুব ভালো সিদ্ধান্ত হবে।
আর বছরে একটি বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে সেখান থেকে ক্যাডার, ননক্যাডার, প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি- এমনকি অন্য সব পদে নিয়োগ দেয়া উচিত। তাতে নিয়োগে অনিয়ম কমবে।
আর আমি মনে করি, একটি দেশের নিয়োগ পদ্ধতি যত ভালো হবে, তত ভালো ছেলেমেয়েরা আসবে জনপ্রশাসনে। রাষ্ট্রও এগিয়ে যাবে। আশা করছি, নীতিনির্ধারকরা ভাববেন। তবে সব কিছু বাদ দিয়ে শুধু সরকারি চাকরি এ নীতি থেকেও সবাইকে বের হতে হবে। সবার জন্য শুভকামনা।
সূত্রঃ যুগান্তর