সাধারণ জ্ঞান। কারও কাছে আগ্রহের বিষয়, কারও-বা ভয়ের কারণ। আগ্রহ বা ভয় যেটাই থাক না কেন মোদ্দা কথা হলো, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা তথা বিসিএসের ক্ষেত্রে সাধারণ জ্ঞানে আপনাকে অসাধারণ হতেই হবে। শুধু প্রিলিমিনারি নয়, লিখিত ও ভাইভায় এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। তাই যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে এটি পড়তে হবে। সাধারণ জ্ঞানের ভিত্তি গড়া শুরু হয় মূলত প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির সময়। এই পর্যায়ে সময়ও তুলনামূলকভাবে বেশি পাওয়া যায়। তাই সময়কে কাজে লাগাতে হবে। এ সময়ে যে যত কৌশলী হবে সে তত ভালো করবে। মনে রাখবেন, সময় না থাকা আর সময় থেকেও কাজে না লাগানো একই কথা।
সাধারণ জ্ঞানে দুইটা ভাগ আছে। যথা: ১) বাংলাদেশ বিষয়াবলি, যাতে নম্বর ৩০; ২) আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, যাতে নম্বর ২০। অর্থাৎ সর্বমোট ৫০ বা এক-চতুর্থাংশ প্রশ্ন আসে সাধারণ জ্ঞান থেকে। তাই গুরুত্বের সঙ্গে এগোতে হবে। এই অংশে ভালো করার জন্য নিচে উল্লিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারেন।
ক) প্রতিদিন পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে হবে। দৈনিক এক ঘণ্টা সময় দিতে হবে। পাঁচটি পাতা ভালো করে দেখবেন। প্রথম, শেষ, সম্পাদকীয়, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক। প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নোট করুন।
খ) অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বই, নবম-দশম শ্রেণির ইতিহাস ও পৌরনীতি বই পড়তে হবে।
গ) সাধারণ জ্ঞানের জন্য একটা গাইডও অনুসরণ করতে পারেন। সেটা নতুন বিশ্ব হতে পারে।
ঘ) সংবিধান সাধারণ জ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটিকে তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে পড়তে হবে। যথা: ১) সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস, ২) গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদসমূহ এবং ৩) সংশোধনীসমূহ। ১৫৩ অনুচ্ছেদের মধ্যে নিচের অনুচ্ছেদগুলো ভালো করে পড়তে হবে। যথা: ২(ক), ৩, ৪, ৪(ক), ৫, ৬, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬,১৭, ১৮, ১৮(ক), ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৩(ক), ২৪, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৯, ৫২, ৫৫, ৫৭, ৫৯, ৬০, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৭০, ৭৬, ৭৭, ৮১, ৮৭, ৯১, ৯৩, ৯৪, ১০২, ১০৬, ১০৮, ১১৭, ১১৮, ১২১, ১২২, ১২৩, ১২৭, ১৩৭, ১৩৮, ১৩৯, ১৪০, ১৪১, ১৪১(ক), ১৪১(খ), ১৪১(গ), ১৪২, ১৪৮, ১৫৩।
ঙ) ১৯০৫ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনের কিছু বিষয় মনোযোগ দিয়ে পড়লেই হবে। যেমন: পলাশী যুদ্ধ, বক্সারের যুদ্ধ, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, নীল বিদ্রোহ, সিপাহি বিদ্রোহ ইত্যাদি।
চ) ১৯০৫ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনকে গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে। কারণ এই সময়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার মূল ক্ষেত্রগুলো তৈরি হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো: বঙ্গভঙ্গ, বঙ্গভঙ্গ রদ, লক্ষ্ণৌ চুক্তি, সাইমন কমিশন, জিন্নাহর ১৪ দফা, লাহোর প্রস্তাব, ভারত স্বাধীনতা আইন ইত্যাদি।
ছ) ১৯৪৭ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত সময়কে ইতিহাস অংশে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য আপনি ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেনের লেখা বাংলাদেশের ইতিহাস: ১৯০৫-১৯৭১ বইটি পড়তে পারেন।
জ) বাংলাদেশ ও বিশ্বের দুইটি মানচিত্র সংগ্রহে রাখবেন। এটা খুব বেশি পড়ার কিছু নেই। মাঝে মাঝে একটু দেখবেন।
ঝ) বাজারে তথ্যবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন পাওয়া যায়। আপনি যেকোনো একটি সংগ্রহ করবেন এবং মাসের শুরুতেই পড়ে ফেলবেন। কারণ, বেশি পুরোনো হলে আর পড়তে ইচ্ছা করে না।
ঞ) সাধারণ জ্ঞান সব সময় পরিবর্তন হতে থাকে। এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর যা বর্তমানে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে তা পড়ার দরকার নেই।
ট) আন্তর্জাতিক যে ঘটনাগুলো একটু মনোযোগ দেবেন—আমেরিকার স্বাধীনতাযুদ্ধ, খণ্ডবিখণ্ড জার্মানির একত্রীকরণ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, স্নায়ুযুদ্ধ, জাতিসংঘের উত্থান ও অঙ্গসংগঠনসমূহ ইত্যাদি।
ঠ) আন্তর্জাতিক অংশে আরও তথ্য জানার জন্য ড. তারেক শামসুর রেহমানের বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর বইটি দেখতে পারেন।
ড) ঐতিহাসিক কোনো ঘটনার প্রেক্ষাপটসহ পড়তে চেষ্টা করুন। এতে গল্পের মতো তা মনে রাখা যায়।
ঢ) ভৌগোলিক বিষয়, দেশগুলোর অবস্থান, দ্বীপ, যুদ্ধ, রাজধানী, মুদ্রা, কোনো সংগঠনের সদস্যদের নাম ইত্যাদি ছন্দ আকারে মনে রাখতে পারেন।
ণ) সাম্প্রতিক বিষয় থেকে প্রশ্ন হবেই। বর্তমান সময়ে যা সবচেয়ে বেশি আলোচিত—রোহিঙ্গা সমস্যা ও গণহত্যা, উত্তর কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অবনতি, সিরীয় সংকট, আইএসের ভূমিকা ইত্যাদি।
ত) পত্রিকায়, নেটে বা অন্য কোথায় নতুন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেলে তা নোট খাতায় টুকে রাখবেন। অন্যথায় কিছুদিন পর ভুলে যাবেন।
থ) যদি সুযোগ থাকে টপিকস ধরে গ্রুপ স্টাডি করতে পারেন। অর্থাৎ একদিন একেকজন নির্দিষ্ট টপিক উপস্থাপনা করল। এতে অনেকটা সহজ হয়ে যায়।
দ) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৭ থেকে বাছাই করে কিছু তথ্য পড়ে নিতে হবে।
ধ) ফেসবুকে সাধারণ জ্ঞানভিত্তিক বেশ পেজ বা গ্রুপ আছে। এতে সংযুক্ত থাকতে পারেন। কারণ, আপনি একটা উল্লেখযোগ্য সময় এমনিতেই ফেসবুকে থাকেন। তাহলে কাজের জিনিসই দেখুন।
ন) পরীক্ষার একেবারে কাছাকাছি ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা ততটা জোর দিয়ে না পড়লেও চলবে।
প) বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি পড়ার জন্য প্রতিদিন সময় বরাদ্দ রাখবেন। চর্চার ওপর না থাকলে ভুলে যাবেন।
ফ) গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান প্রধানগণের নাম ও তাঁদের সর্বশেষ সম্মেলন কোথায় হলো মনে রাখুন।
এভাবে পড়তে পারলে সাধারণ জ্ঞানের অবস্থান আরও ভালো জায়গায় চলে যাবে। আর কিছু প্রশ্ন অজানা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে খুব বেশি হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। খেয়াল রাখবেন, যা আয়ত্ত করেছেন তা যেন ভুল না হয়। সামান্য পড়ে ছেড়ে দিলে দেখবেন কনফিউশন হবে। তাই ভালো করে আয়ত্ত করুন। তাহলে ভালো পরীক্ষা হবে।
লেখক: প্রশাসন ক্যাডার (২য় স্থান) ৩৪তম বিসিএস।