দেশে আগামী ১ জুলাই থেকে অবৈধ মুঠোফোন বন্ধের প্রযুক্তি চালু হবে। ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) নামের এ ব্যবস্থায় অবৈধভাবে আমদানি করা মুঠোফোন চালু করা যাবে না। তবে গ্রাহকের হাতে থাকা অবৈধ মুঠোফোনকে সময় দেবে বিটিআরসি।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনইআইআর ব্যবস্থা ১ জুলাই থেকে চালুর প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছি আমরা। রাজস্ব ফাঁকি রোধ ও অবৈধ মুঠোফোন ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিরোধে এ ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ব্যবস্থাটি চালু করব এমনভাবে যাতে গ্রাহকের ওপর চাপ না পড়ে।’
বিটিআরসির চেয়ারম্যান আরও বলেন, মানুষ বিদেশ থেকে কিনে বা উপহার হিসেবে অথবা উপহার দিতে মুঠোফোন আনতে পারবে। তবে বেশি পরিমাণে আনলে সরকারকে কর দিতে হবে।
বিটিআরসি মুঠোফোন বৈধ না অবৈধ, তা যাচাই করতে এনইআইআর নামের এ ব্যবস্থা চালু ও পরিচালনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে। প্রযুক্তিগত সমাধান পেতে সংস্থাটি সিনেসিস আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত নভেম্বরে চুক্তি করে।
এনইআইআর ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে বৈধভাবে আমদানি ও উৎপাদিত মুঠোফোনের তথ্যভান্ডারের সঙ্গে মোবাইল নেটওয়ার্কে চালু হওয়া ফোনের আইএমইআই (মুঠোফোন শনাক্তকরণ নম্বর) মিলিয়ে দেখা হবে। অবৈধ, চুরি যাওয়া ও নকল মুঠোফোন দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে চালু করা যাবে না।
আমরা ব্যবস্থাটি চালু করব এমনভাবে যাতে গ্রাহকের ওপর চাপ না পড়ে।
শ্যাম সুন্দর সিকদার, বিটিআরসির চেয়ারম্যান
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, দেশে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ স্মার্টফোন অবৈধভাবে আমদানি করা হয়। এ কারণে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারায় সরকার।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাধারণ মানুষ জানে না কোনটা বৈধ, কোনটা অবৈধ ফোন, কীভাবে যাচাই করতে হয়। এ বিষয়ে বিটিআরসিকে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। তিনি বলেন, একটি মুঠোফোন আমদানিতে ৫৭ শতাংশ কর দিতে হয়। দেশে উৎপাদিত হলেও মুঠোফোনের দাম তেমন একটা কমেনি। এ কারণে মোট গ্রাহকের মাত্র ৪০ শতাংশ এখন স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারে। মুঠোফোন সেটের দাম যাতে মানুষের নাগালে আনা যায়, সেটা নিয়েও সরকারকে কাজ করতে হবে।
মুঠোফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ গত মার্চে ‘মোবাইলনির্ভর ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশে মুঠোফোন ব্যবহারকারী ৪১ শতাংশের মুঠোয় আছে স্মার্টফোন। এ হার ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, এমনকি নেপালের চেয়েও কম। বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার কারণ স্মার্টফোনে উচ্চ হারে কর।
বিটিআরসির কর্মকর্তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অবৈধ মুঠোফোন বন্ধের বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন। পাঠকের জন্য সেই প্রশ্ন ও উত্তর—
মুঠোফোনে খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে অনেক সময় আইএমইআই সংশ্লিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না, এ বিষয়ে করণীয় কী?
যেসব মুঠোফোন অবৈধভাবে আমদানি করা হয়েছে এবং যেগুলোর আইএমইআই নম্বর বিটিআরসির তালিকাভুক্ত আমদানিকারক ও প্রস্তুতকারক সংযোজন করেননি, সেগুলোর আইএমইআই নম্বর এ তথ্যভান্ডার থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ১ আগস্ট তথ্যভান্ডার চালু হয়। এর আগের মুঠোফোনের আইএমইআই নম্বর তথ্যভান্ডারে নেই।
সাধারণ মানুষ জানে না কোনটা বৈধ, কোনটা অবৈধ ফোন, কীভাবে যাচাই করতে হয়। এ বিষয়ে বিটিআরসিকে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।
মহিউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি
এনইআইআর সিস্টেমটি কীভাবে পরিচালিত হবে, অর্থাৎ গ্রাহক কীভাবে এতে সম্পৃক্ত থাকবেন?
এনইআইআর সিস্টেমটি সরাসরি প্রত্যেক মুঠোফোন অপারেটরের নিজ নিজ এনআইআরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। গ্রাহকদের মুঠোফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিবন্ধিত হয়ে ব্যবহারের উপযোগী হবে। এনইআইআর সব মুঠোফোনের বৈধতা যাচাইয়ের মাধ্যমে বৈধ না অবৈধ, তা তাৎক্ষণিক চিহ্নিত করবে। ফোন কেনার পর সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট লাগতে পারে।
বাজারে আগে যে মুঠোফোন রয়েছে বা সাধারণ গ্রাহক যে সেটগুলো ব্যবহার করছেন, এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে সেগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে?
২০১৯ সালের ১ আগস্টের আগে মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত এবং ওই সময়ের পরে বৈধ পথে আমদানি অথবা দেশে উৎপাদিত মুঠোফোনের তথ্য বিটিআরসির কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। এর বাইরে কোনো অবৈধ মুঠোফোন থাকলে কমিশন ধাপে ধাপে সেগুলো বন্ধের ব্যবস্থা নেবে। এখন পর্যন্ত কমিশনের চিন্তা হলো, সেটগুলোকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, দেশে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ স্মার্টফোন অবৈধভাবে আমদানি করা হয়। এ কারণে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারায় সরকার।
বিদেশ থেকে ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে আসা, কারও উপহার বা অনলাইনে কেনা মুঠোফোনের ক্ষেত্রে কী হবে?
এনইআইআর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রাহকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মুঠোফোন কেনার রসিদ যাচাই করে নিবন্ধন দেওয়া হবে। বিদেশ থেকে উপহার পাওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রমাণ দেখাতে হবে। একই ব্যক্তি বারবার উপহার দিচ্ছেন, তা দেখানো যাবে না।
দেশে এখন ব্যবহৃত হওয়া একই আইএমইআই নম্বরের নকল মুঠোফোনের ক্ষেত্রে কী হবে?
এসব ফোন তালিকা করে তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। পরে তা বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা রয়েছে।
মুঠোফোন বৈধ না অবৈধ, তা যাচাইয়ের পদ্ধতি কী?
মুঠোফোনের বৈধতা যাচাইয়ের পদ্ধতি হলো মুঠোফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD স্পেস ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর লিখে 16002 নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি মেসেজ বা খুদে বার্তায় বৈধ না অবৈধ, তা জানা যাবে। মুঠোফোনের মোড়কে স্টিকারে আইএমইআই নম্বরটি থাকে। এর বাইরে *#06# ডায়াল করে আইএমইআই নম্বর জানা যায়।
সুত্রঃ প্রথম আলো