১। সৌদিআরব- ঈদের মধ্যে ৫দিন কারফিউ থাকবে।সূত্রঃ প্রথম আলো

২। ইন্দোনেশিয়ায় রমজানে ঘরে বসে নামাজ, ঈদের জামাত বাতিল।১মাস আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ( সূত্রঃ  বাংলাদেশ প্রতিদিন )

৩।পশ্চিমবঙ্গ - আগে মানুষ বাঁচুক তারপর ঈদের উৎসব, মমতাকে ইমামদের চিঠি।( সূত্র: সময় টিভি)

৪। বাংলাদেশ ঈদের জামায়াত হবে তবে মসজিদে।তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করো। স্বাস্থ্য বিধি মেনে দুই দিন মার্কেট করে আক্রান্ত ৫০০ থেকে ১১০০ তে নিয়ে গিয়েছি আমরা ।  এইবার আমারা  ২০০০ নিয়ে যাবো। অন্য জামায়াত আর ঈদের জামায়াতের মধ্যে প্রার্থক্য কি এইটা আগে আমাদের বুঝতে হবে।


ঈদের জামায়াতে জনসংখ্যা অধিক আর এখানে শুধু গ্রামের বা এলাকার স্থানীয় মানুষ এই থাকবে না। জেলা শহর থেকে,ঢাকা থেকে,নারায়ণগঞ্জ থেকে,চট্রগ্রাম থেকে, বা যে কোন জায়গা থেকেই যে ব্যাক্তিগুলো বাসায় আসবে তারা কি নামাজে যাবে না?? এতো অধিক মানুষের মধ্যে কি ভাবে তাদের আলাদা করবেন???

আমার দৃষ্টিতে এইটা আলাদা করা অসম্ভব।  আর কেউ নামাজে গেলে তাকে কি আপনি বের করে দিতে পারবেন??


সত্যি কথা বলতে আমরা সবাই নিজেকে করোনা মুক্ত ভাবি কিন্তু এতো জায়গা ঘুরে আসার পরে আমি তো আক্রান্ত হতেই পারি।  অনেকে ভাবছে এমন কিছু হবে না , গাড়ি বন্ধ থাকবে কেউ বাসায় যাবে না। তাদের আমি বলতে চাই বর্তমানে যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের খবর নেন। প্রতিটা ব্যাক্তি লকডাউন অমান্য করেই বাসায় এসেছে ।  আর তারাই আক্রান্ত বেশি ৯০%।


 করোনা কি তা বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে পারছে না??


আমি একটু বোঝানোর  চেষ্টা করিঃ

গত ৭ তারিখে আমার গ্রামে একজন এসেছে নারায়ণগঞ্জ থেকে , গ্রামের কোন মানুষ জানেই না । ৮ তারিখে পরীক্ষার জন্য নমুনা নিয়েছে, ৯ তারিখে রিপোর্ট পজেটিভ। ১২ তারিখ পর্যন্ত বাসায় রেখে চিকিৎসা দিয়েছে , তার পরে হাঁসপাতালে নিয়ে গিয়েছে।

 ১৩ তারিখ নতুন রিপোর্ট তার বাসায় তার পরিবারের আরো ২জন আক্রান্ত, তার মা এবং নানি।এই.২জন আক্রান্ত হয়েছে তার ৯ তারিখের পজেটিভ রিপোর্ট আসার আগেই ২দিনের মধ্যেই। এইটা ৯ তারিখে নমুনা সংগ্রহ করেছিল তার পরেও ৩ দিন তাকে বাসায় রেখেছিল। ঐ বাসায় যত ব্যক্তি আছে সবাই করোনা পজেটিভ হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯%। আল্লাহ ছাড়া কেউ রক্ষা করতে পারবে না কারণ গ্রামের মানুষ বোঝে কম। তারে দেখতেও গিয়েছিল অনেকে।


শুধু এইটুকু না, যদি কোন কারণে ঐ বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে প্রবেশ করে, তা হলে সম্পূর্ণ গ্রাম আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।  কতটা ভয়াবহ করোনা!! আপনার ছোট ভুলে পরিবার শেষ হতে পারে।  


আমাদের বর্তমানে ব্যাক্তিগত কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎঃ


১। আমরা যারা শহরে আছি, তারা সবাই নিজ অবস্থানেই থাকবো। কোন ভাবেই গ্রামে যাওয়া যাবে না।  


২। আমরা যারা মুসলিম ভাই তারাদের কে বলতে চাই , আবেগ দিয়ে কিছু হবে না । যারা শহরে থাকেন তারা দয়া করে ঈদের নামাজে না যাওয়া ভাল । কারণ শহরের কোন ব্যাক্তিই জানে না কে কোথায় থেকে আসলো। এমন কি এক বিল্ডিং এ থাকলেও বোঝা কঠিন কে কোথায় গিয়েছিল ।  


৩।গ্রামের মানুষদের জন্য বলতে চাই আপনাদের গ্রামে যদি ১৫ দিন আগে থেকে নতুন কোন ব্যাক্তি প্রবেশ না করে এবং লকডাউন সঠিক ভাবে পালন হয়ে থাকে। আপনারা জামায়াত করতে পারেন কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ্য করবেন নতুন কোন ব্যাক্তি গ্রামে আসলে বা সেইটা পাশের গ্রাম থেকেই হয়না কেন তাদের আলাদা রাখেন।শহর থেকে কেউ আসলে তার পরিবারকেই আলাদা রাখেন । তা না হলে মহাবিপদে পরবেন ।


৪। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এইটা একটা আত্বঘাতী সিদ্ধান্ত । সরকার কোন ভাবেই মানুষের স্থানান্তর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না ।


বাংলাদেশের করোনা পরিস্তিতি কতটা খারাপ ???


১। সবাই দেখি ইতালির সাথে তুলোনা দিচ্ছেন । ইতালির ৫০তম দিন থেকে আমাদের অবস্থা এখনও ভাল । আমার কথা আপনি ইতালির ৫০তম দিন দেখতে যাবেন কেন?? আপনি আজকের ইতালির সাথে তুলনা করেন । গতকাল নতুন আক্রান্ত ৯৯৯ জন ইতালিতে আর বাংলাদেশে ১০৪৩ জন। ইতালিতে মোটা আক্রান্ত ২লাখ ২৩ হাজার তারা এইটা থেকে আক্রান্ত এত কমে নিয়ে এসেছে । আর আপনারা ১৮ হাজার আক্রান্ত হয়েছে তাই দেখেন আক্রান্ত কত বৃদ্ধি পাচ্ছে ।ফ্রান্সে দেখেন গতকাল আক্রান্ত ৮১০ জন।


আপনারা আজাইরা উদাহরণ দিচ্ছেন কিন্তু তাদের দিকে ভাল করে লক্ষ্য না করলে তো শিক্ষা নিতে পারবেন না!  

তারা কি ভাবে এতো কমে আসলো???


কারণ তারা নামে লকডাউন দেয়নি এতো দিনে করোনা আক্রান্তদের আলাদা করেছে আর তাই তারা বর্তমানে বাংলাদেশের থেকেও কম আক্রান্ত । আপনারা তো এখনই কিছু করতে পারছেন না , ইতালির মত হয়ে গেলে কি হবে আগে ভাবেন ।


২।আপনারা ইতালির সাথে তুলোনা কেন দিচ্ছেন ??? আপনার আশে পাশে কত দেশ আছে সেখানে দেখেন। ৪ এপ্রিল বাংলাদেশে মোট আক্রান্ত ছিল ৭০ জন , বর্তমান-১৮হাজার+ । শ্রীলঙ্কায় ছিল  ১৫৯জন,বর্তমান-৯২৫জন , নেপালে ৬ জন , বর্তমান-২৪৯জন  । ভুটানে ৫জন ,বর্তমান-২০জন । মালদ্বীপে ১৯জন ,বর্তমান-৯৮২জন। ভারত , বাংলাদেশ ,আর পাকিস্থানের অবস্থা সব চেয়ে খারাপ দক্ষিণ এশিয়ায় । দক্ষিণ এশিয়ার অন্যদেশের দিকে লক্ষ্য করেন বাংলাদেশের থেকে বেশী দুই মাস আগে আক্রান্ত হয়েও  বর্তমানে কত কম আক্রান্ত । এর পরেও বলবেন আমরা ইতালির থেকে ভাল আছি???


আপনার মনে প্রশ্ন হতে পারে তা হলে ভারত , পাকিস্তান ও বাংলাদেশে আক্রান্ত এতো বেশি কেন???


কারণ একটাই এই তিন দেশেই ধর্মীয় রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা , সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বড় বড় ভুল করেছে ।একজন বলেছে দেশের জনগণ আগে , অন্যজন বলেছে না ,দেশের অর্থনীতি আগে । দেশের জনগন বলছে তার আগে আমাদের ধর্মীয় বিষয় গুলো বাদ দিয়ে যা খুশি করেন । মানে অনেক টা এমন গার্মেন্টস খুলে দিবে বলে সবাই কে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে বলছে গার্মেন্টস বন্ধ থাকবে ।

এই ৩দেশ সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল ফলে করোনা পরিস্তিতি এতো খারাপ। ভারত বর্তমানে বিশ্বে ১২তম  , বাংলাদেশ বিশ্বে ৩০তম আর পাকিস্তান বিশ্বে ২০তম। ২মাসের মধ্যেই এতো উন্নতি হয়েছে । আগামী ১মাসে প্রথম পাঁচ দেশের মধ্যে এই ৩ দেশ থাকবে। যেমনঃ রাশিয়া ও ব্রাজিল দুই মাসেই প্রথম ৫দেশের মধ্যে গিয়েছে ।  


৩। আপনারা বেশি আক্রান্ত দেশ গুলোর দিকে কেন তাকিয়ে আছেন ? তারা পারেনি কিন্তু আপনার পাশের দেশ গুলো তো স্বাভাবিক আছে । আপনাদের কথা শুনে আমার ছোট বেলার কথা মনে পরে । আমার মা সব সময় এলাকার যারা ভাল তাদের উদাহরণ দিতো- বলতো দেখ সে কত ভাল পড়াশুনা করে বিশেষ করে আমাদের বাসায় কাজ করতো এবং স্কুলের সময় স্কুলে যেতো তার পরেও রোল ১ থাকতো তাদের । অনেক গরীব হলেও ৩ ভাই একই রকম মেধাবী ছিল ( বর্তমানে ১জন বুয়েটের শিক্ষক , একজন রাশিয়াতে পিএইচডি করছে ,আর একজন কোম্পানিতে চাকরি করে।) ৩জনই আমার শিক্ষকও ছিল।  আমি উত্তর দিতাম সব সময় যারা ভাল তাদের উদাহরণ কেন দেন , যারা খারাপ তাদের দিকে দেখেন, তাদের থেকে কত ভাল আমি। আমার মা বলতো ভাত খেতে বসলে মাছ,ডিম মাংস লাগে কেন?? আমি বলতাম খেতে ভাল লাগে তাই । তখন বলতো ভাল জিনিস খেতে ভাল লাগে আর ভাল জিনিস নিতে খারাপ লাগে? তখন আমি চুপ। বর্তমানেও আমাদের দেশেও তাই হচ্ছে ভাল জিনিস গুলো না নিয়ে আমার ছোট বেলার মত  খারাপের থেকে ভাল এই বলছি অনেকটা শিশুর মত।


সর্বশেষ বলতে চাই দেশের করোনা থেকে মুক্তি দিতে পারে আল্লাহ্‌ কিন্তু সেইটা ধর্মীয় বিষয় সেইটা সবার মানা উচিৎ তবে আল্লাহ্‌ আপনাকে জ্ঞান বুদ্ধিও দিয়েছে প্রয়োগ করার জন্য আল্লাহ্‌ উপরে সব ছেড়ে দিয়ে আপনি যা ইচ্ছে তাই করবেন এইটা হতেই পারে না। আমার একটা বন্ধু পোস্ট দিয়েছিল কয়দিন আগে- করোনায় আল্লাহ্‌ যা করবে তাই বলে ঘুরে বাড়াচ্ছেন ঠিক আছে , তো মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সময় চাকরীজীবী খোঁজেন কেন?? এইটা মজা করে পোস্ট দিলেও শিক্ষার বিষয় আছে , আমরা যেটা করবো সেইটা বিভিন্ন অযুহাত দিয়ে তাকে সঠিক প্রমাণ করবো , আর যেটা করবো না সেইটা বিভিন্ন অযুহাত দিয়ে ভুল প্রমাণ করবো এইটাই আমাদের স্বভাব ।তবে করোনা মুক্তির জন্য দেশকে  পরিচালনা করতে হবে সরকারকেই । যদি এই রকম ভুল সিদ্ধান্ত চলতে থাকে, তা হলে আগামী মাসে দেশের অবস্থা ভয়াবহ হবে । স্থানান্তর করোনা হার বেড়ে দিবে, দেশের ৯৯% মানুষ আক্রান্ত হতে পারে । সরকারের উচিৎ একটা নিদিষ্ট পরিকল্পনায় দেশ কে এগিয়ে নেওয়া । আজ একটা সিদ্ধান্ত ,কাল একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে সব চেয়ে বেশি বিপদে ফলছে । এই সিদ্ধান্তহীনতায় বাংলাদেশের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে ।


অনেকে বলতে পারে খেয়ে কাজ নাই জ্ঞান দিতে এসেছে । তাদের বলবো ভাই এখান থেকে একজন শিক্ষা নিয়ে যদি ভাল থাকে তা হলেও আমার ৩ঘন্টা  লেখা সার্থক । বাঁকিটা আপনাদের উপরে । কোন ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।