ঘুম থেকে উঠার পরেই হাতে মোবাইল নিয়ে যখন দেখতে পায় শতশত মানুষ মারা গিয়েছে তখন স্বাভাবিক ভাবেই আমরা আতংকিত । যদিও আমি সারা দিন রুমের মধ্যেই থাকি কিন্তু এতো বড় সমস্যা নিয়ে আমাদের মধ্যে  আতংক তো থাকবেই । আমার দেশের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আতংক হওয়ার কিছু নাই কিন্তু তাদের কথায় কি আতংক কম হবে? যেখানে চীন ,ইতালি , যুক্তরাজ্য , যুক্তরাষ্ট্র , ইরান সহ অনেক উন্নত দেশ এখন প্রায় মৃত্যুপুরী হয়েছে । সেখানে আমাদের মত ছোট এবং জনবহুল দেশের ভয়ের অনেক কারণ আছে । আর সব চেয়ে বড় কথা আমার দেশের সরকার মাত্র ১০০০-১০০০০ হাজার বিদেশ ফেরত ব্যাক্তির আলাদা কোয়ারেন্টিনে রাখার ক্ষমতা রাখে না , সেই দেশে একবার ভাইরাস ছড়িয়ে গেলে কি হবে সেইটা তো আমরা ভাবতেই পারছি না। যেহেতু  বিদেশ থেকে এই ভাইরাসের আগমন সেই হিসেবে আমাদের তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ আছে ??? তাদের বাসায় ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখা সব চেয়ে বড় ভুল । একজন ব্যাক্তি যখন বাসায় থাকবে তখন অনেক ভাবে এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যাবে ।খাবারের বিষয় আছে , গোসলের বিষয় আছে(সে যেখানে স্পর্স করবে, সেখান থেকেই ভাইরাস বিস্তার করবে ), এমন কি তার জ্বর সর্দি কাশি কোনটার একটাও যদি হয় দেখা যাবে সে থুতু ফেলবে , কাশ ফেলবে এই গুলো থেকে ও ভাইরাস ছড়িয়ে যাবে ।(বিশেষ করে মানুষ জানালা দিয়ে থুতু ফেলে কাশ ফেলে এইটা এখন পর্যন্ত সতর্ক করা হয়নি ) এমন কি দেখা যাবে একজন আক্রান্ত ব্যাক্তি খাবার সব খেতে পারেনি , সেইটা ফেলে দিয়েছে  বা কাশ ফেলেছে সেইটা থেকে কুকুর ও  আক্রান্ত হতে পারে, সেই কুকুর ও ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে ।  মানুষ ব্যাক্তিগত ভাবে সতর্ক থাকলেও নিজের অজান্তেই এই গুলো ছড়িয়ে দিবে ।যেখানে দেখাই যাচ্ছে অন্যদেশ থেকে আমাদের দেশে ভাইরাসের আগমন হচ্ছে , সেখানে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রেখে দেশকে বিপদে ফেলার আমি কোন মানেই খুজে পাইনা । অনেকে হয়তো প্রশ্ন করতে পারে তা হলে কি করা উচিৎ ছিল ??    

এইটা একটা মহামারি তাই এই জন্য আলাদা একটা জায়গা কে কোয়ারেন্টিন হিসেবে ব্যবহার করা উচিৎ ছিল । যেখানে একটা রুম থাকবে এবং সাথেই একটা বাথরুম এবং টিভি থাকবে । যাতে কোন ব্যাক্তি ১৪দিন যেন এই রুম থেকে বের না হয় ।তাদের খাবার থেকে শুরু করে সকল ব্যয়ভার সরকার নিলে আমার মনে হয়না কেউ  এই বিষয়ে কথা বলবে । আর সাথে দেশও নিরাপদ থাকবে । এখন প্রশ্ন করতে পারেন এতো রুম কোথায় পাবে সরকার ?

দেশে হাজার হাজার হোটেল  আছে যেখানে এমন রুম পাবে । একজন ব্যাক্তি দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সব কিছু রুমে পেলে  থাকতে তেমন কষ্ট হবে না।  


আর একটা প্রশ্ন থাকতে পারে সরকার কেন ব্যয়ভার বহন করবে?

এই জন্য ব্যয়ভার বহন করবে কারণ সে যখন বিদেশছিল তখন দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছে । আর সব চেয়ে বড় বিষয় যদি এইটা করে দেশের সব মানুষ নিরাপদ থাকে,  তা হলে এখানে যদি ১০ হাজার কোটি টাকা খরচও হয় তাতে কি । দেশে তো হাজার হাজার কোটি টাকার দূর্নীতি হয় ।  একটা ভাল কাজে ব্যয় করে যদি নিরাপদ থাকা যায় দোষের কি।


আমার দৃষ্টিতে এইটা একটা বড় ভুল কারণ দেশের  ৯৯% বাসাতে কমন বাথরুম , এমন কি দেশের ৯৯% মানুষের স্বভাব কাশ ,থুথু জানালা দিয়ে বাহিরে ফেলা,  আর এইটা কোন কারণে অন্য কারো স্পর্সে আসলে মহামারি আকার ধারণ করবে , কারণ আমরা এখন টার্গেট করতেছি শুধু বিদেশীদের  তখন দেশের সকল মানুষকে টার্গেট করতে হবে। আর গ্রামের কোন মানুষের মধ্যে যদি কোন ভাবে এই ভাইরাস যায় তা হলে সে কিছু মনেই করবে না কিছু ,  চিন্তা করবে জ্বর হয়েছে নাপা খেয়ে বসে থাকবে  , এমন কি সর্দি হলে মনে মনে ভাবতে থাকবে এমনি ঠিক হয়ে যাবে।  এই ভাবে দেখা যাবে সে সম্পূর্ণ গ্রামে ছড়িয়েছে । এই বিষয়টা যখন ছোট পরিসরে আছে তখন আমরা কেন এইটা বড় করতে চাচ্ছি । আমি ব্যাক্তিগত ভাবে সরকারের এই ভুল সিদ্ধান্তের  জন্য আতংকিত । কারণ এখন পর্যন্ত যে ৫জন আক্রান্ত পাওয়া গিয়েছে তাদের কিন্তু বাড়িতেই রাখা হয়েছিল তারা দেশে আসার পরেই ধরা পরে নাই তারা আক্রান্ত ।আমার দৃষ্টিতে বর্তমানে দেশের উন্নয়নের থেকে দেশের মানুষের নিরাপত্তা অনেকটা বেশি প্রয়োজন । তাই অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা না ভেবে ,  দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখার চিন্তা করা উচিৎ সরকারের ।  


আর সবচেয়ে বড় ভয়ের কারণ দেশের মূর্খ নেতারা এমন মহামারী নিয়েও তেলমারে সরকার কে ।কি ভুল খুঁজে বের করে মানুষকে নিরাপদ রাখার চিন্তা করবে তা না তাদের মাথায় শুধু একটাই চিন্তা তেল কি ভাবে মারবে । এদের দেখে লজ্জাও লজ্জা  পেয়ে পালিয়ে যাবে।তারা নিজেদের নেতা বলে দাবী করে।


অনেকেই এইটাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না কিন্তু আমার দৃষ্টিতে এইটাই অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ ।পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত মারাই গিয়েছে ৫ হাজার + তাও উন্নত চিকিৎসা থাকার পরেও । তাই অবহেলা করে নিজেকে এবং দেশের মানুষ কে অনিরাপদ করেন না। এইটা ভাবার বিষয় এবং আতংকিত হওয়ার ও বিষয় কারণ তা না হলে আপনি সচেতন হবেন না।  


এই সব বলার কারণ আতংকিত করার জন্য নয় , মানুষকে সচেতন করার জন্য । নিজের অবস্থান থেকেই আমাদের নিরাপদ থাকতে হবে ।  

করোনা ভাইরাস সতর্কতায় আমাদের করণীয়ঃ


১। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল অন্তত ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে কোচলে হাত ধোয়া। হাতের দু’পিঠই ভালো করে ধুতে হবে। আঙুলের খাঁজ যাতে পরিষ্কার হয়, খেয়াল রাখতে হবে।


২। আপনি যখন বাহিরে যাবেন তখন  পায়ে জুতা পরবেন ,

 বাসায় প্রবেশের আগে নিজেকে ভাল ভাবে পরিস্কার করবেন।


৩। ঠান্ডা পানি খাবেন না , এমনকি একটা জিনিস লক্ষ্য রাখবেন যে জিনিস গুলোর জন্য জ্বর, সর্দি হয় সেই গুলো ত্যাগ করেন । যদিও এই গুলো কোরনার কারণ না কিন্তু নিরাপত্তার বিষয় ।কারণ  অসুস্থ মানুষের কোরনা হলে বেশি সমস্যা হয় । তাই নিজেকে সুস্থ রাখেন ।


৪। বিভিন্ন পোষা প্রাণী থেকে নিজেদের দূরে রাখেন । বিশেষ করে কুকুর থেকে নিজেকে দূরে রাখেন ।জীবিত ও মৃত গবাদি পশু/ বন্য প্রাণী থেকে দূরে থাকতে হবে।


.৫।  স্কুলে বা পড়তে যাওয়ার সময় অথবা বাইরে গেলে আপনার সন্তানকে ভালো হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে বলুন।

সহপাঠীর জ্বর হলে খুব বেশি কাছে না ঘেঁষাই ভালো, এই সময়ে হ্যান্ড শেক যেন না করে।


৬।স্কুল কর্তৃপক্ষ ক্লাসরুমের টেবিল চেয়ার পরিচ্ছন্ন রাখুন। মেঝে, দেওয়াল, বাথরুম পরিষ্কার করা হোক জীবাণু নাশক দিয়ে।


৭। হাঁচি কাশি হলে সন্তানদের মুখে মাস্ক পরার পরামর্শ দিন।


৮।ভ্রমণকারী আক্রান্ত হলে হাঁচি/কাশির সময় দূরত্ব বজায় রাখা, মুখ ঢেকে হাঁচি/কাশি দেয়া ও যেখানে সেখানে থুথু না ফেলা।


৯।থুতু , কাশি এমন কি হাঁচি থেকে সব চেয়ে বেশি এই ভাইরাস বিস্তার করে থাকে ।  তাই মানুষ যে সব জায়গায় এই সব ফেলে দেয় সেই স্থান থেকে দূরে থাকেন বিশেষ করে মানুষের বাড়ির জানালা পাশে না যাওয়া ভাল। আর পাগল বা যারা জুতা না পরেই সারাদিন ঘুরে বাড়াই তাদের থেকে নিজেদের নিরাপদ  রাখেন ।  


১০। প্রয়োজন না হলে বাসার বাহিরে না যাওয়া ভাল ।


লিখেছেনঃ মোঃ এনামুল হক