১।
১. রেফ-এর পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন : অর্চনা, অর্জন, অর্থ, অর্ধ, কর্দম, কর্তন, কর্ম, কার্য, গর্জন, মূর্ছা, কার্তিক, বার্ধক্য, বার্তা, সূর্য।
২. সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার (ং) লেখা যাবে। যেমন : অহংকার, ভয়ংকর, সংগীত, শুভংকর, হৃদয়ংগম, সংঘটন। তবে অঙ্ক, অঙ্গ, আকাঙ্ক্ষা, গঙ্গা, বঙ্গ, লঙ্ঘন, সঙ্গ, সঙ্গী প্রভৃতি সন্ধিবদ্ধ নয় বলে ঙ স্থানে ং হবে না। অ-তৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, মিশ্র শব্দ।
৩. সমাসবদ্ধ পদগুলো একসঙ্গে লিখতে হবে, মাঝখানে ফাঁক রাখা চলবে না। যেমন : সংবাদপত্র, অনাস্বাদিতপূর্ব, পূর্বপরিচিত, রবিবার, মঙ্গলবার, স্বভাবগতভাবে, লক্ষ্যভ্রষ্ট, বারবার, বিষাদমণ্ডিত, সমস্যাপূর্ণ, অদৃষ্টপূর্ব, দৃঢ়সঙ্কল্প, সংযতবাক, নেশাগ্রস্ত, পিতাপুত্র।
বিশেষ প্রয়োজনে সমাসবদ্ধ পদটিকে একটি, কখনো একটির বেশি হাইফেন (-) দিয়ে যুক্ত করা যায়। যেমন মা-মেয়ে, মা-ছেলে, বেটা-বেটি, বাপ-বেটা, ভবিষ্য-তহবিল, সর্ব-অঙ্গ, বে-সামরিক, স্থল-জল-আকাশ-যুদ্ধ, কিছু-না-কিছু।
৪. তৎসম শব্দের অনুরূপ বানানের ক্ষেত্রে যেমন পূর্বে বলা হয়েছে, অ-তৎসম সকল শব্দেও রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন : কর্জ, কোর্তা, মর্দ, সর্দার।
৫. তৎসম অর্থাৎ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অবিকৃত সংস্কৃত শব্দের বানান যথাযথ ও অপরিবর্তিত থাকবে। কারণ এইসব শব্দের বানান ও ব্যাকরণগত প্রকরণ ও পদ্ধতি নির্দিষ্ট রয়েছে।
অর্থগত ভাবে শব্দসমূহকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়-
১। যৌগিক শব্দ ২। রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ ৩। যোগরূঢ় শব্দ
যৌগিক শব্দ– যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ একই, তাদের যৌগিক শব্দ বলে।
অর্থাৎ, শব্দগঠনের প্রক্রিয়ায় যাদের অর্থ পরিবর্তিত হয় না, তাদেরকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন-
মূল শব্দ | শব্দ গঠন (অর্থ) | অর্থ= ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ একই |
গায়ক | গৈ+অক | যে গান করে |
কর্তব্য | কৃ+তব্য | যা করা উচিত |
বাবুয়ানা | বাবু+আনা | বাবুর ভাব |
মধুর | মধু+র | মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত |
দৌহিত্র | দুহিতা+ষ্ণ্য (দুহিতা= মেয়ে, ষ্ণ্য= পুত্র) | কন্যার মত, নাতি |
চিকামারা | চিকা+মারা | দেওয়ালের লিখন |
প্রত্যয় বা উপসর্গ যোগে গঠিত যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ আলাদা হয়, তাদেরকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন-
মূল শব্দ | শব্দ গঠন | ব্যুৎপত্তিগত অর্থ | ব্যবহারিক/ মূল অর্থ |
হস্তী | হস্ত+ইন | হাত আছে যার | একটি বিশেষ প্রাণী, হাতি |
গবেষণা | গো+এষণা | গরম্ন খোঁজা | ব্যাপক অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা |
বাঁশি | বাঁশ+ইন | বাঁশ দিয়ে তৈরি | বাঁশের তৈরি বিশেষ বাদ্যযন্ত্র |
তৈল | তিল+ষ্ণ্য | তিল থেকে তৈরি সেণহ পদার্থ | উদ্ভিদ থেকে তৈরি যে কোন সেণহ পদার্থ |
প্রবীণ | প্র+বীণা | প্রকৃষ্টরূপে বীণা বাজায় যিনি | অভিজ্ঞ বয়স্ক ব্যক্তি |
সন্দেশ | সম+দেশ | সংবাদ | মিষ্টান্ন বিশেষ |
যোগরূঢ় শব্দ: সমাস নিষ্পন্ন যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ আর ব্যবহারিক অর্থ আলাদা হয়, তাদেরকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন-
মূল শব্দ | শব্দ গঠন | ব্যবহারিক অর্থ |
পঙ্কজ | পঙ্কে জন্মে যা | পদ্মফুল |
রাজপুত | রাজার পুত্র | একটি জাতি বিশেষ, ভারতের একটি জাতি |
মহাযাত্রা | মহাসমারোহে যাত্রা | মৃত্যু |
জলধি | জল ধারণ করে যা/ এমন | সাগর |
গিতাঞ্জলি- গীতাঞ্জলি
উপকারীতা- উপকারিতা
আষার- আষাড়
দারিদ্রতা-দারিদ্র্য/দরিদ্রতা
শান্তনা- সান্ত্বনা
অক্কা পাওয়া-মারা যাওয়া। যে কোন দিনই থুত্থুড়ে বুড়োটা অক্কা পেতে পারে।
তাল পাতার সেপাই– অতিশয় দুর্বল। তোমার মত তাল পাতার সেপাই দিয়ে কোন কাজ হবে না।
চাঁদের হাট–প্রিয়জন সমাগম। ঈদকে ঘিরে আমাদের বাসায় রীতিমতো চাঁদের হাট বসে।
তাসের ঘর– ক্ষণভঙ্গুর/ ক্ষণস্থায়ী। ওদের বন্ধুত্ব তাসের ঘরের মত ভেঙে গেছে।
সাক্ষী গোপাল– নিষ্ক্রিয় দর্শক। তোমার মত সাক্ষী গোপাল বন্ধু আমার দরকার নাই।
১. পূর্বদিকে সূর্য উদয় হয়- সূর্য পূর্বদিকে উদিত হয়
২. আসছে আগামীকাল কলেজ বন্ধ হবে- আগামীকাল কলেজ বন্ধ হবে
৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভয়ংকর কবি ছিলেন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ব কবি ছিলেন
৪. সকল ছাত্রগণই পাঠে অমনোযোগী- সকল ছাত্রই পাঠে অমনোযোগী।
৫. ইহার আবশ্যক নাই- ইহার আবশ্যকতা নাই
শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করে শির,. লিখে রেখো, এক ফোঁটা দিলেম শিশির।।
মূল ভাব : অকৃতজ্ঞরা অপরের সামান্য উপকার করলে তা গর্ব ভরে প্রচার করে বেড়ায়।
সম্প্রসারিত ভাব : দিঘির জলেই শৈবালের জন্ম। সেই জল থেকে সে পায় প্রাণশক্তি। তাই দিঘির জলের কাছে তার ঋণের শেষ নেই। কিন্তু এই অনিঃশেষ ঋণের কথা স্বীকার না করার হীন প্রয়াস দেখা যায় শৈবালের আচরণে। রাতের শিশির বিন্দু শৈবালের ওপর থেকে দিঘির বুকে গড়িয়ে পড়ামাত্রই শৈবাল সদম্ভে তার দানের কথা দিঘিকে জানিয়ে দেয়। সে ভুলে যায়, দিঘির কাছে তার ঋণের তুলনায় তার দান কত নগণ্য। এমনকি এটাও ভুলে যায় যে দানটুকু তার নিজের নয়, তাও প্রকৃতির কাছ থেকেই পাওয়া।
বাস্তব জীবনে ও বিচিত্র মানবজগতে এর প্রতিফলন দেখা যায়। পৃথিবীতে মহত্ লোকেরা আমৃত্যু নীরবে দান করে যান। কিন্তু সংকীর্ণমনা, নিচুমনা ব্যক্তিরা অন্যের দান কেবল অস্বীকার করে না, কাউকে বিন্দুমাত্র উপকার করলে তা সদম্ভে শতমুখে প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এভাবে আত্মপ্রচারের ফলে তাদের ক্ষুদ্র দানের সামান্য মহিমাটুকুও ম্লান হয়ে যায়।
মন্তব্য : তাই প্রত্যেকের উচিত উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু।
মানুষ বহু অর্থ ও সময় ব্যয় করে দূর-দূরান্তে সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্যে যায়। কিন্তু ঘরের কাছের অনির্বচনীয় সৌন্দর্যটুকু দেখা হয় না বলে সে দেখা পূর্ণতা পায় না।
ক) চর্যাপদের ভাষাকে কেন সান্ধ্য ভাষা বলা হয়?
উত্তর : সন্ধ্যায় থাকে আলো আঁধারের খেলা। সন্ধ্যার সময় কোন কিছু স্পষ্টরূপে দেখা যায় না। তেমনিভাবে হাজার বছর আগে লেখা চর্যাপদের ভাষাতেও অস্পষ্টতা থাকার কারণে এই ভাষাকে সন্ধ্যা বা সান্ধ্য ভাষা বলা হয়েছে। কেউ কেউ এ ভাষাকে আলো আঁধারের ভাষা বলেছেন।
খ) বাংলা কাব্যে ভোরের পাখি বলা হয় কাকে? তার দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লিখুন।
ঊত্তরঃ বিহারীলাল চক্রবর্তী কে বাংলা কাব্যে ভোরের পাখি বলা হয়। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বাঙলা গীতি কাব্য-ধারার ‘ভোরের পাখি’ বলে আখ্যায়িত করেন।
তার দুটি কাব্যগ্রন্থের নামঃ
এছাড়াও…….
গ) সনেট কি? সার্থক সনেট রচিয়তার পরিচয় দিন।
উত্তরঃ সনেট হলো ১৪ পঙ্ক্তি বিশিষ্ট কবিতা। ইতালীয় Sonetto (sound-piece : ধ্বনিখণ্ড) হতে সনেট শব্দের উদ্ভব। ইতালীয় কবি পেত্রার্ক এর জনক। বাংলা সনেট চতুর্দশ কবিতা নামে পরিচিত। এর বাংলায় প্রবর্তক মাইকেল মধুষূধন দত্ত। আরো অনেক কবিই পরে এধরনের কবিতা রচনা করেছেন। সনেটের বৈশিষ্ট. :- সনেট কবিতার বৈশিষ্ট হলো এর চরন ও মাত্রা সমান চৌদ্দটি করে।
মাইকেল মধুসূদন (১৮২৪-১৮৭৩) মহাকবি, নাট্যকার, বাংলাভাষার সনেট প্রবর্তক, অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে, এক জমিদার বংশে তাঁর জন্ম। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত উকিল। মা জাহ্নবী দেবীর তত্ত্বাবধানে মধুসূদনের শিক্ষারম্ভ হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি ও নাট্যকার। তাঁকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয়। ব্রিটিশ ভারতের যশোর জেলার এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশে জন্ম হলেও মধুসূদন যৌবনে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে মাইকেল মধুসূদন নাম গ্রহণ করেন এবং পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণবশত ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন আকৃষ্ট হন নিজের মাতৃভাষার প্রতি। এই সময়েই তিনি বাংলায় নাটক, প্রহসন ও কাব্যরচনা করতে শুরু করেন।
Full Solution is ongoing…..Plz wait…..