পরীক্ষাপদ্ধতি : বাংলাদেশ রেলওয়ে (চট্টগ্রাম) সূত্রে জানা যায়, ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস পদে লিখিত ও মৌখিক এবং অন্যান্য পদে শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা হবে। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর যোগ্যদের ঠিকানায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্র পাঠানো হবে। ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস পদের পরীক্ষায় মোট ১০০ নম্বর থাকবে। এর মধ্যে ৭০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা ও ৩০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রার্থীকে ন্যূনতম ৫০ নম্বর পেতে হবে। আয়া, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ওয়েটিং রুম আয়া ও ল্যাম্পম্যান পদের পরীক্ষার বিষয়ে তিনি জানান, এসব পদে শুধু ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমেই যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা হবে। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য একজন প্রার্থীকে মোট নম্বরের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, চারিত্রিক সনদ, মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধাসংশ্লিষ্ট সনদ, পোষ্য কোটা সনদসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সব সনদের মূল কপি সঙ্গে রাখতে হবে। নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হবে বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রাম ও রাজশাহী কেন্দ্রের মাধ্যমে। প্রার্থী বাছাইয়ে সরাসরি নিয়োগের বিদ্যমান নীতিমালা ও সরকার নির্দেশিত কোটা অনুসারে প্রার্থী নির্বাচন ও নিয়োগ দেওয়া হবে।

 

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি : বাংলাদেশ রেলওয়ে (পূর্ব), চট্টগ্রাম, পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানায় মোন্ডার (স্কিল গ্রেড-২) পদে কর্মরত রেজাউল করিম বলেন, ‘ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস পদের লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান—এই চারটি বিষয়ে প্রশ্ন করে থাকে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ। এ চার বিষয়ের বেশি প্রশ্ন আসে মাধ্যমিক শ্রেণির পাঠ্য বই থেকেই; বিশেষ করে ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্য বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই থেকে প্রশ্ন করা হয়। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষার জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য ও ব্যাকরণের কিছু কমন বিষয় ভালো করে নিজের আয়ত্তে আনতে হবে। তাই বাংলায় ব্যাকরণের বাগধারা, বাক্য রচনা, এককথায় প্রকাশ, সন্ধি, কারক, সমাস, ণত্ববিধান, ষত্ববিধানসহ বেশ কিছু টপিক থেকে প্রশ্ন আসে। সাহিত্যের অংশ থেকে কবির নাম, কবিতার নাম, কোনো গল্পের লেখকের নাম ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। ইংরেজিতে ব্যাকরণের ট্রান্সলেশন, টেনস, ভার্ব, ট্রু-ফলস, মাল্টিপল চয়েস, প্রিপজিশন, সিনোনিম, এনাটমি ইত্যাদি বিষয়ে ভালো দখল থাকতে হবে। গণিতে ভালো করতে চাইলে অষ্টম শ্রেণির পাটিগণিত বইটিতে ভালো দখল রাখতে হবে। সরল, সুদকষা, শতকরা, ঐকিক নিয়ম, লসাগু, গসাগু, শতাংশ—এসব অংশ থেকেই বেশি প্রশ্ন করা হয়। সাধারণ জ্ঞানে বাংলাদেশের সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহ নিয়েই সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন করা হয়। একই সঙ্গে স্থান পায় আন্তর্জাতিক ইস্যুর তথ্যভিত্তিক প্রশ্ন। ২০১২ সালের এ পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন দেখা যেতে পারে। তাহলে পরীক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে। সহায়ক হতে পারে অন্যান্য পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক বই। লিখিত পরীক্ষার পর ভাইভা বোর্ডে নিজেকে উপস্থাপন করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে যারা ভালো করবে, তারাই নিয়োগের জন্য মনোনীত হবে। ভাইভা বোর্ডে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে নিজেকে সব সময় আপডেট রাখতে হবে।’

 

মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি : আয়া, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ওয়েটিং রুম আয়া এবং ল্যাম্পম্যান পদের মৌখিক পরীক্ষায় প্রার্থীর নিজের সম্পর্কেই সাধারণত প্রশ্ন করা হয়। এর পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। দেখা হয় শারীরিক যোগ্যতাও। যোগ্যতার পাশাপাশি দায়িত্ব পালনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হতে পারে। সচেতনতা, সতর্কতা, নিয়মানুবর্তিতাসহ নানা বিষয়ে ইতিবাচক দিকগুলোর প্রতি জানতে চাওয়া হয়। মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করার জন্য সাধারণ জ্ঞানে দক্ষতা রাখতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ্য বই এবং সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে আপডেট থাকতে হবে। নিজেকে গুছিয়ে মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থাপন করতে পারলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যেতে পারে। এ পদের জন্য নিজ এলাকার বিষয়ে অনেক তথ্য জানতে চাওয়া হয়। নানা তথ্য জানা থাকলে সঠিক উত্তর দেওয়া যাবে।

 

বেতন-ভাতা : উত্তীর্ণ প্রার্থীর পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর রাজস্ব খাতে নিয়োগ পাবেন। ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস পদে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীকে বাংলাদেশ রেলওয়ে মেকানিক্যাল কোড অনুসারে চার বছর প্রশিক্ষণ নিতে হবে। প্রশিক্ষণ চলাকালে একজন ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুসারে ৮২৫০-২০০১০ টাকা মাসিক বেতন দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে স্কিল্ড গ্রেড-২ অনুসারে ৯৭০০-২৩৪৯০ টাকা বেতন স্কেলপ্রাপ্ত হবেন। আয়া, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ওয়েটিং রুম আয়া এবং ল্যাম্পম্যান পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা ৮২৫০-২০০১০ টাকা মাসিক বেতন এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রদেয় অন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন।


পদ ও যোগ্যতা : রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ও প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে জানা যায় ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস নেওয়া হবে ৬৭৭ জন। এসএসসি বা সমমানের পাস হলেই আবেদন করা যাবে এ পদটিতে। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ অনুসারে এ পদের প্রার্থীদের বয়স থাকতে হবে ১৬-২০ বছরের মধ্যে। আয়া ১১ জন, নিরাপত্তা প্রহরী ৩৮ জন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ২১৫ জন, ওয়েটিং রুম আয়া ২ জন, ল্যাম্পম্যান ২ জন। এসব পদে আবেদনের যোগ্যতা অষ্টম বা সমমান পাস। বয়স ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ অনুসারে ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হতে হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, এতিম ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে বয়স ৩২ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য।

 

আবেদন পদ্ধতি : আবেদন ফরম, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রবেশপত্র বাংলাদেশ রেলওয়ের .িত্ধরষধুি.মড়া.নফ ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফরম ও প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে এ-ফোর সাইজের কাগজে প্রিন্ট করে নিতে হবে। সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের তিন কপি ছবি আবেদনপত্র ও প্রবেশপত্রের নির্ধারিত স্থানে পেস্ট করতে হবে। ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস পদের পরীক্ষার ফি বাবদ ১০০ টাকা এবং অন্যান্য পদের জন্য ৫০ টাকা ‘কোড নম্বর ১-৫১৩১-০০০০-২০৩১’ ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিয়ে মূল কপি আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। সরকারি সংস্থা/আধা সরকারি সংস্থায় কর্মরতদের নিজ নিজ দপ্তরের মাধ্যমে আবেদন পাঠাতে হবে। সঙ্গে পাঁচ টাকার ডাকটিকিটসহ আবেদনকারীর ঠিকানা লেখা দুটি খাম আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। সব পদের আবেদনপত্র আগামী ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ তারিখ পর্যন্ত বিকেল ৫টার মধ্যে ‘চিফ পার্সোনেল অফিসার/পূর্ব বাংলাদেশ রেলওয়ে, সিআরবি, চট্টগ্রাম ঠিকানায় সরাসরি বা ডাকযোগে পৌঁছাতে হবে। আবেদন খামের বাঁ দিকের ওপরের অংশে পদের নাম ও প্রার্থীর নিজ জেলার নাম স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে।