সকল সরকারি চাকরির তথ্য সবার আগে মোবাইলে নোটিফিকেশন পেতে মোবাইলে রাখুন
Android App: Jobs Exam Alert

দেশ কেন পরিবর্তন হচ্ছে না? সেই একই পথে কেন বাংলাদেশ? কারণ একটাই—কেউ চায় না দেশ পরিবর্তন করতে। হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে বর্তমান সরকারকে আমরা কী করতে দিয়েছি? শুরুতে আন্দোলনের পর আপনাদের মতো আমারও চিন্তা ছিল, ইউনূস সরকার দেশ পরিবর্তন করতে পারবে। তবে ১ বছরেও আমার চোখে এমন কোনো পদক্ষেপ পড়েনি যা দেশ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

আসলে আমাদের দেশের সমস্যা কি?

দুর্নীতি, ঘুষ, চাঁদাবাজি ,জালিয়াতি এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার—

সরকারের সমালোচনাঃ

এই সরকারের একটি পদক্ষেপ আমার দৃষ্টিতে ভালো লাগেনি। তারা কাজ করেছে শুধু কাগজে কলমে পরিবর্তনের। কাগজে কলমের পরিবর্তনে দেশ পরিবর্তন সম্ভব নয়। আর একটি বড় সমস্যা হলো অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে বড় বড় রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা দেখে দেশ পরিবর্তনের চেষ্টা করা। আসলেই কি এভাবে দেশ পরিবর্তন সম্ভব? উন্নত দেশের মানুষের নৈতিকতা আর আমাদের দেশের চোর ও চাঁদাবাজদের নৈতিকতা কি একই? আমাদের ভাবতে হবে আমাদের দেশের অবস্থা এবং মানুষের আচরণ ও সমস্যাগুলো নিয়েই দেশ পরিবর্তনের চেষ্টা করতে হবে। অন্য দেশের শাসন ব্যবস্থা আমাদের ঘাড়ে চেপে দিলে কি দেশ পরিবর্তন হবে? কোনো দিন না। আমাদের দেশের কি কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নাই বা এমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নাই যে নতুন একটা শাসন ব্যবস্থা বা আমাদের সমস্যার সমাধানের মতো একটা শাসন ব্যবস্থা তৈরি করতে পারবে, যাতে আমাদের প্রধান সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে?

সরকারের উচিৎ বেসিক নাগরিক সেবা উন্নতি করা:

নাগরিক সেবার মান উন্নয়নে সরকারের করণীয়

দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য মৌলিক নাগরিক সেবার মান উন্নত করা অপরিহার্য। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি এবং মোবাইল ফোন চুরির মতো সমস্যাগুলো নাগরিকদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এই সমস্যাগুলো সমাধানে সরকার নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে:

১. সরকারি সেবা গ্রহণে ঘুষ ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করা

শুধু মাত্র  আইন দিয়ে সব সময় মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, বরং সামাজিক ভয় এবং সম্মানহানির আশঙ্কা অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। এই সমস্যাগুলো মোকাবিলায় সরকার নিম্নলিখিত কৌশলগুলো অবলম্বন করতে পারে:

  • দ্রুত অ্যাকশন টিম গঠন: প্রতিটি জেলায় বা উপজেলায় একটি করে দ্রুত অ্যাকশন টিম (Rapid Action Team - RAT) গঠন করা যেতে পারে। এই টিম জনবলের দিক থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী হবে এবং তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
  • অভিযোগের জন্য কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম: একটি সহজবোধ্য এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ তৈরি করতে হবে, যেখানে নাগরিকেরা সহজেই ঘুষ, চাঁদাবাজি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখার ব্যবস্থা থাকতে হবে, যদি তিনি চান।
  • অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা: অভিযোগ প্রাপ্তির সাথে সাথে অ্যাকশন টিমকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে (যেমন, ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে) ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করা হবে। অভিযোগের অগ্রগতির ট্র্যাক রাখার সুযোগ নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
  • সামাজিক বয়কট ও সম্মানহানির ভয়: যারা এই ধরনের অপরাধে জড়িত হবে, তাদের নাম ও ছবি (প্রয়োজনে) জনসম্মুখে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে সমাজের চোখে তাদের সম্মানহানি হবে এবং ভবিষ্যতে এমন কাজ করার আগে তারা দ্বিতীয়বার ভাববে। সরকারি চাকরিতে থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের পদাবনতি বা বরখাস্তের মতো পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
  • গণসচেতনতা বৃদ্ধি: এই প্ল্যাটফর্ম এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরির জন্য প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ এর সুবিধা সম্পর্কে জানতে পারে এবং নির্ভয়ে অভিযোগ করতে পারে।

এই পদ্ধতি ১-২ মাস কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে পারলে সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এবং এই ধরনের অপরাধ কমে যাবে।

২. ভুয়া দলিল ও ভুয়া ঋণ ব্যবস্থা বন্ধ করা

ভুয়া দলিল এবং ভুয়া ঋণ দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক খাতে একটি বড় সমস্যা। এর সমাধানে একটি আধুনিক এবং কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা অপরিহার্য:

  • কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ ও ডিজিটাল নিবন্ধন: দেশের সমস্ত জমি, দলিল, লোন এবং মামলার তথ্য একটি কেন্দ্রীয় ডিজিটাল সার্ভারে নিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময় পূর্ববর্তী মালিকানা, লোনের অবস্থা এবং কোনো মামলা আছে কিনা, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার: সাধারণ নাগরিকরা যেন একটি নির্দিষ্ট পোর্টালে গিয়ে যেকোনো জমির বর্তমান মালিকানা, পূর্ববর্তী দলিলের ইতিহাস, কোনো লোনের আওতায় আছে কিনা, অথবা কোনো মামলা চলমান আছে কিনা, তা দেখতে পারেন, সেই ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এতে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং ভুয়া দলিলের মাধ্যমে প্রতারণা কমে যাবে।
  • সমন্বিত তথ্য ব্যবস্থা: ভূমি মন্ত্রণালয়, ব্যাংক, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং আদালতের তথ্যকে একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্মে আনতে হবে। এতে এক দপ্তরের তথ্য অন্য দপ্তর সহজেই যাচাই করতে পারবে, যা জালিয়াতি প্রতিরোধে সাহায্য করবে।
  • বায়োমেট্রিক ও ডিজিটাল স্বাক্ষর: দলিল নিবন্ধনের সময় বায়োমেট্রিক যাচাই (যেমন, আঙুলের ছাপ) এবং ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহারের মাধ্যমে মালিকানা নিশ্চিত করা যেতে পারে, যা জালিয়াতি প্রতিরোধে সহায়ক হবে।

৩. মোবাইল ফোন চুরি হলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ

মোবাইল ফোন এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি ব্যক্তিগত তথ্যের ভান্ডার এবং আর্থিক লেনদেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ফোন চুরি হলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক:

  • সহজ অনলাইন জিডি এবং ট্র্যাকিং সিস্টেম: একটি কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপ তৈরি করতে হবে, যেখানে মোবাইল ফোন চুরি বা হারানোর জন্য সহজেই একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা যাবে। জিডি করার সময় ফোনের IMEI নম্বর (International Mobile Equipment Identity) বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করতে হবে।
  • স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাকিং ব্যবস্থা: জিডি করার পর, নাগরিকেরা তাদের IMEI নম্বর ব্যবহার করে নিজেরাই ফোনের বর্তমান অবস্থান, কোন নেটওয়ার্কে সক্রিয় আছে, অথবা কে ব্যবহার করছে, তা ট্র্যাক করতে পারবেন। এটি একটি ডেটাবেজ দ্বারা পরিচালিত হবে যা মোবাইল অপারেটরদের সাথে সংযুক্ত থাকবে।
  • পুলিশি সহযোগিতা ও দ্রুত পুনরুদ্ধার: যখন কোনো নাগরিক দেখবেন যে তার চুরি যাওয়া ফোন অন্য কেউ ব্যবহার করছে এবং অবস্থান চিহ্নিত করতে পারবেন, তখন সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনকে অবহিত করবে। পুলিশ দ্রুত অ্যাকশন নিয়ে ফোন পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করতে বাধ্য থাকবে। প্রয়োজনে, ফোন ব্যবহারকারীর ঠিকানা এবং পরিচয়ও সিস্টেম থেকে পাওয়া যাবে।
  • IMEI ব্লক করার ব্যবস্থা: চুরি হওয়া ফোনের IMEI নম্বর দ্রুত ব্লক করার ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে ফোনটি অন্য কোনো সিম ব্যবহার করে চালানো না যায়।

এই সহজ এবং কার্যকর পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে মোবাইল ফোন চুরির ঘটনা যেমন কমবে, তেমনি নাগরিকেরা দ্রুত তাদের হারানো ফোন ফিরে পাবেন।

এই প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের নাগরিক সেবার মান রাতারাতি উন্নত হবে এবং জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে।