খাদ্য অধিদপ্তর ২৪ ধরনের (ক্যাটাগরি) এক হাজার ১৬৬টি শূন্য পদের বিপরীতে দরখাস্ত আহ্বান করেছিল গত ১১ জুলাই। আবেদন করার শেষ দিন ছিল গত ১৪ আগস্ট। সেই দিন পর্যন্ত এসব পদের বিপরীতে আবেদন করেছেন ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯২৩ জন। অর্থাৎ প্রতি পদের বিপরীতে গড়ে আবেদন করেছেন প্রায় এক হাজার ১৮২ জন। সব আবেদনকারীকেই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ডাকা হবে।
খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন এ কে এম ফজলুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এতসংখ্যক প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার সাধ্য আমাদের নেই। তাই এসব প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এই তিন প্রতিষ্ঠানের যেকোনো একটিকে পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হবে। লিখিত পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের। আর মৌখিক পরীক্ষা হবে মাত্র ১০ নম্বরের। খুব শিগগিরই লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে।’
খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৪ ধরনের পদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পদ অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর বা এএসআই। এর ২৭৪টি শূন্য পদের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ছয় লাখ ৩৩ হাজার ৯৫২টি। এএসআইয়ের প্রতিটি পদের জন্য লড়বেন দুই হাজার ৩১৩ জন। এর পরই রয়েছে সাব-ইন্সপেক্টর বা এসআই পদ। এর ২৫০টি পদের জন্য প্রতিযোগিতা করবেন চার লাখ ১১ হাজার ৮৯৬ জন। অর্থাৎ প্রতিটি পদের জন্য লড়বেন এক হাজার ৬৪৭ জন।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, “একেকটি পদের বিপরীতে এত বিপুলসংখ্যক আবেদনের কারণ হচ্ছে ঘুষ। খাদ্য অধিদপ্তরের প্রতিটি পদেই ‘উপরি’ আছে। এ পদগুলো তৃতীয় শ্রেণির হওয়ায় শিক্ষাগত যোগ্যতা কম চাওয়া হয়েছে। এ জন্য আবেদনকারীদের সংখ্যা বেশি। বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষায় হাইকোয়ালিটির লোক চাওয়া হয়। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও চাওয়া হয় বেশি। সে জন্য বিসিএসে এক পদের বিপরীতে আবেদনকারীর সংখ্যা এত বেশি হয় না।” দেশে বেকারের মিছিল কমাতে হলে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
নাম প্রকাশ না করে খাদ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খাদ্য অধিদপ্তরের সবাই অবৈধভাবে পয়সা কামাই করে না। কিছু পদে অফিসিয়ালভাবেই কিছু টাকা আয় হয়। চাল বা গম জাতীয় খাদ্য চলাচলে ১.২৫ শতাংশ নষ্ট হবে—এটা স্বীকৃত। কিন্তু যারা নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম খাদ্য নষ্ট করে সেই টাকাটা তারা বৈধভাবেই পায়। একইভাবে যারা গুদামে কাজ করে তাদেরও বৈধভাবেই বেতনের অতিরিক্ত টাকা আয় করার সুযোগ রয়েছে। তার পরও খাদ্য অধিদপ্তরের বদনাম রয়েছে। তার কারণও আছে। ফুড ইন্সপেক্টররা পদোন্নতি পেয়েও উপজেলায় বসতে চান না। কারণ উপজেলায় ঘুষ নেই। ঘুষ আছে ফুড সাব ইন্সপেক্টর বা অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর পদে।’
এই কর্মকর্তা মনে করেন, অন্যবারের মতো এবার নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক কম হবে। কারণ গত নিয়োগে যে দুর্নীতি হয়েছে তা নিয়ে মামলা চলছে। এখনো খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালকরা দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও দায়ের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত বছর ডিসেম্বরে ৩৮তম বিসিএসে দুই হাজার ২৪টি পদের জন্য আবেদন করেছিলেন তিন লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮ জন। প্রতিটি পদের জন্য লড়েছিলেন ১৯২ জন। ২০১৬ সালের ৩৭তম বিসিএসে প্রতিটি পদের জন্য লড়েছেন ১৯৯ জন।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ফুড ইন্সপেক্টর ও সাব ইন্সপেক্টর পদ ছাড়াও আরো ২২ ধরনের পদে জনবল নিয়োগ হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে স্টেনোগ্রাফার কাম কম্পিউটার অপারেটরের আটটি পদের বিপরীতে আবেদন করেছেন এক হাজার ৮৩৪৩ জন। স্টেনো টাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটরের ১৫টি পদের জন্য দুই হাজার ৪৩৪টি। এ ছাড়া ৩১টি আপার ডিভিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট পদের জন্য ৪২ হাজার ৬০৪টি, ১৬টি অডিটর পদের জন্য ২৫ হাজার ৫৩৯টি, ছয়টি অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম ক্যাশিয়ার পদের জন্য তিন হাজার ৮০৬টি, দুটি ল্যাবরেটরি ট্যাকনিশিয়ান পদের জন্য ৪১৮টি, একটি ফোরম্যান পদের জন্য ৩০৭টি, দুটি মেকানিক্যাল ফোরম্যান পদের জন্য ২৭১টি, ২০টি অপারেটর পদের জন্য ৩০৬টি, ৯টি ইলেকট্রিশিয়ান পদের জন্য এক হাজার ১৯৫টি, একটি ভেহিক্যাল ইলেকট্রিশিয়ান পদের জন্য ১৭টি, তিনটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ফোরম্যানের জন্য ৮৯টি, তিনটি মিল রাইট পদের জন্য ৬৫টি, ৪০২টি অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট পদের জন্য দুই লাখ ২৪ হাজার ৬৩০টি, ছয়টি ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদের জন্য এক হাজার ৪৭৬টি, আটটি ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট পদের জন্য দুই হাজার ৮০৭টি, ১১টি অ্যাসিস্ট্যান্ট পদের জন্য ৮১টি, ছয়টি সর্দার পদের জন্য ১৫টি, চারটি ভেহিক্যাল মেকানিক পদের জন্য ১৯টি, পাঁচটি অ্যাসিস্ট্যান্ট মিল রাইটের জন্য ৪৬৫টি, ৫৬টি সাইলো অপারেটর পদের জন্য ৪৬৫টি এবং ২৭টি স্প্রেম্যান পদের জন্য ২৪ হাজার ৬৭৫টি আবেদন জমা পড়েছে।
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ