শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, শিগগিরই বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলার জারি করা হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন মহলের বাধা, মামলাসহ নানা জটিলতার কারণে গত প্রায় দু’বছর ধরে এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া যাচ্ছিল না।
শিক্ষাবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইরাব) নবনির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সোমবার তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সারা দেশে বর্তমানে প্রায় ৩৮ হাজার বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা আছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানে গত দুই বছর ধরে (সহকারি শিক্ষক ও প্রভাষক) শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ আছে। মৃত্যু, পদত্যাগসহ নানা কারণে ওইসব প্রতিষ্ঠানে ৬০ হাজার শিক্ষকের পদ বর্তমানে খালি আছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সার্কুলার অনুযায়ী এসব পদ পূরণ হওয়ার কথা।
তিনি বলেন, কিন্তু উল্লেখিত জটিলতায় পড়ে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিতে পারছিল না। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। সর্বশেষ ও প্রথমবারের মতো ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষক নিয়োগের মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর এখন পর্যন্ত আর দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সভায় শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, নতুন এমপিওভুক্তির বন্ধ খুলবে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে গত ৮ বছর ধরে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে পারিনি। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থপ্রাপ্তির আশ্বাস পাওয়া গেছে।
এ বছর নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেবল যোগ্য প্রতিষ্ঠান এবং দক্ষ শিক্ষকরাই এমপিওর জন্য বিবেচিত হবেন। নীতিমালার আলোকেই প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হবে। মেধাতালিকার বাইরে অন্য কোনো তালিকা থেকে এমপিও দেয়া হবে না। কেননা, এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে আমরা একটা স্থায়ী সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
দুপুরে ওই মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, ইরাব সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক সাব্বির নেওয়াজ, সিনিয়র সহসভাপতি মুসতাক আহমদ, সহসভাপতি নিজামুল হক।
এছাড়াও বক্তৃতা করেন যুগ্মসম্পাদক মামুন হোসেন, অর্থ সম্পাদক শরীফুল আলম সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক অভিজিৎ ভট্টাচার্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নূর মোহাম্মদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আকতারুজ্জামান, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুরাদ হোসাইন, কার্যনির্বাহী সদস্য আমানুর রহমান এবং সিনিয়র সদস্য এমএইচ রবিন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব নাজমুল হক খান, উপসচিব সুবোধ চন্দ্র ঢালী এবং শিক্ষামন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব জাকির হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের কাছ থেকে আমরা কেবল ইতিবাচক খবরই প্রত্যাশা করি না, গঠনমূলক সমালোচনাসহ নেতিবাচক খবরও আশা করি। কেননা, এতে মন্ত্রণালয় ও এর অধীন প্রতিষ্ঠানের ত্রুটিবিচ্যুতি জানতে পারি। ফলে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা একটি শিক্ষানীতি করেছি। সেটির অধিকাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকিগুলোও বাস্তবায়নের কাজ চলছে। অংশীজনের মতামত নিয়ে শিক্ষা আইন চূড়ান্ত হয়েছে। এখন তা সরকারি কমিটিগুলো যাচাই-বাছাই করছে। ইউজিসি আইন চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরই সেটি কেবিনেটে পাঠানো হবে। এ আইনটি চূড়ান্ত হলে ইউজিসি অনেক শক্তিশালী হবে। সরকারি স্কুল ও কলেজে শিক্ষক নিয়োগে পিএসসির সহায়তায় কাজ চলছে।
শিক্ষাসচিব বলেন, আমরা কেবল ইতিবাচক নয়, নেতিবাচক খবরও চাইছি। এমন খবর আপনারা পরিবেশন করুন যাতে দেশ, জাতি উপকৃত হয়। কিন্তু আপনাদের কাছে ভুল তথ্যসংবলিত কোনো প্রতিবেদন আশা করি না। এমন ঘটনাও আছে, কোনো স্বার্থান্বেষী মহল অর্থবছরের শেষে বেশি দরে আমাদের দিয়ে কোনো কেনাকাটা করাতে চায়। চাপের মুখেও যখন সেই ফাঁদে পা না দিই, পরে দেখি সংবাদপত্রে উল্টো প্রতিবেদন পরিবেশিত হয়। কেউ যেন কোনো গণমাধ্যম প্রতিনিধিকে বিভ্রান্ত করতে না পারে সে প্রত্যাশা আমরা করি।
জবাবে সাংবাদিক নেতারা দেশপ্রেম ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পেশাগত কাজ করার ব্যাপারে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। সূত্রঃ যুগান্তর